রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

গোপনে শেয়ার ব্যবসায় আইডিআরএ চেয়ারম্যান

  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৭.০০ পিএম
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন গোপনে শেয়ার ব্যবসা করার অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। দুটি কোম্পানি খুলে ভবিষ্যৎ তহবিলের মাধ্যমে বিমা কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে তার যুক্ত থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত সপ্তাহে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে গোপনে শেয়ার ব্যবসার অভিযোগ তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে।

ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ার কারসাজি করার লোভ সামলাতে পারেননি এক সময়ের এই শেয়ার মার্কেট পেশাদার। নাটকীয় এই ঘটনার মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান, বিষয়টি অনেকের কাছে এখন আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে।

ওই সময়ে ঢাকা স্টক একচেঞ্জে নাটকীয়ভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে। দুই মাসের মধ্যে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের ৯৬ টাকার শেয়ার দাম বেড়ে ১৬৪ টাকা হয়েছে।

উচ্চ আদালতে বিরোধীপক্ষের আইনজীবীর দাখিল করা প্রতিবেদন মতে, তখন ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন মোশাররফ হোসেন। কোম্পানিতে তার পুরোপরি নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে মোশাররফ হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি তহবিলের মধ্যে তিনটির মাধ্যমে ২০২১ সালের জুনে ডেল্টা লাইফের ৪৫০০০ বেশি শেয়ার কিনেছিলেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

লাভস অ্যান্ড লাইভ অর্গানিকস লিমিটেড এবং গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন এবং পরিচালক তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া। এসব তথ্য গোপান করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হওয়ায় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী নামের একজন বিনিয়োগকারী মোশাররফ হোসেনের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট দায়ের করেন।

কর্মচারীদেরে ভবিষ্যৎ তহবিল এবং দুটি কোম্পানির গ্র্যাচুয়েটির তহবিল সেকেন্ডারি মার্কেটে প্রাথমিক শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়েছেন মোশাররফ হোসেন।

আবেদনকারীর আইনজীবী যখন আইডিআরএ চেয়ারম্যান নিয়োগ, অর্থপাচার ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রমাণাদি জমা দিয়েছেন তখন উচ্চ আদালত সরকারকে তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

শেয়ারের দাম হেরফের করার সবচেয়ে বড় কৌশল গোপনে ব্যবসা বন্ধে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবের স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়ে আসছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বেশ কয়েকটি বিমার শেয়ারে লেনদেন করেছেন, যার মধ্যে পদ্মা লাইফ, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ইসলামী ইন্স্যুরেন্স রয়েছে।

রিট পিটিশনকারীর আইনজীবীরা বলেছেন, মোশাররফ হোসেনের কাজ মূলত নিজের স্বার্থে বিমার শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে গোপনে ব্যবসা করা।

মোশাররফ হোসেন ট্রাস্টি কমিটির চেয়ারম্যান এবং যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসেবে গত বছর সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের প্রাথমিক শেয়ার ধারণ করেও লাভবান হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোশাররফ হোসেন পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সাবসিডিয়ারি পিএলআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টেরও শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন।

তিনি ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একজন পরিচালক। ওই জীবন বিমা কোম্পানিকে না জানিয়ে প্রাথমিক শেয়ারে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত বিনিয়োগ ব্যবহার করার জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তহবিল নিবন্ধন করেছিলেন।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মোশাররফের শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানের বিস্তারিত বিবরণ দেখবেন এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের শীর্ষ পদ থেকে তাকে অপসারণের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কী করেছে তা শুনবেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ তদন্ত করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালনা পর্ষদকে স্থগিত এবং প্রশাসক নিয়োগ করার আগে তিনি কোম্পানির কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com