নিউজ ডেস্ক॥
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, লেক-পাহাড়ের মিশেলে পার্বত্য তিন জেলার অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গ, চা বাগান, অসংখ্য ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনাসহ পর্যটনের অপার সুযোগ থাকার পরও বিদেশি পর্যটক টানতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। শুধু অভ্যন্তরীণ পর্যটক দিয়েই টিকে আছে সম্ভাবনাময় খাতটি। বিদেশি পর্যটকের অভাবে আসছে না কাক্সিক্ষত বৈদেশিক মুদ্রা। জিডিপিতে অবদানের ক্ষেত্রেও আশপাশের দেশ থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের পর্যটন খাত।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, করোনার কারণে পর্যটন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও ২০২১ সালে বিদেশি পর্যটক থেকে ভারত ৮ হাজার ৮০০ মিয়িন ডলার, থাইল্যান্ড ৩ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপ ২ হাজার ১৬০ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কা ৩০৫.২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সেখানে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ১৬৭.২ মিলিয়ন ডলার, যা মিয়ানমারের আয় (২১২.৫ মিলিয়ন ডলার) থেকেও কম। তবে দেশি পর্যটক থেকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের পর্যটন খাত পেয়েছে ৬ হাজার ৭৩৯.৪ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের টাকা। অন্যদিকে করোনার আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিদেশি পর্যটক থেকে আয় করে ৩৬৯.৬ মিলিয়ন ডলার, যখন থাইল্যান্ডের আয় ছিল ৬২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
জিডিপিতে অবদানের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে দেশের পর্যটন খাত। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক জিডিপির ১০.৩ শতাংশ (৯ হাজার ৬৩০ বিলিয়ন ডলার) এসেছিল পর্যটন খাত থেকে। করোনার কারণে ২০২০ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৫.৩ শতাংশে (৪ হাজার ৭৭৫ বিলিয়ন ডলার)। ২০২১ সালে বৈশ্বিক জিডিপির ৬.১ শতাংশ (৫ হাজার ৮১২ বিলিয়ন ডলার) আসে পর্যটন থেকে। তবে ২০২১ সালে জিডিপিতে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অবদান ছিল মাত্র ২.২ শতাংশ, যেখানে মালদ্বীপে ছিল ৪৪.৬ শতাংশ, ভারতে ৫.৮ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৫.৮ শতাংশ, নেপালে ৪.৩ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৩.১ শতাংশ।
বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অংশীদারিত্ব ছিল ২০১৯ সালে ৯ হাজার ৮১৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২২৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারে। ২০২১ সালে কিছুটা বেড়ে হয় ৭ হাজার ৮৩৩ দশকি ৪ মিলিয়ন ডলার। তবে এই আয়ের সিংহভাগই আসে দেশি পর্যটক থেকে। ২০২১ সালের পর্যটন থেকে আয়ের মাত্র ২ শতাংশ এসেছিল বিদেশি পর্যটক থেকে। ২০১৯ সালে সেটা ছিল ৪ শতাংশ। এদিকে ২০২১ সালে আগত বিদেশি পর্যটকের ৫৯ ভাগই এসেছে ভারত থেকে। এ ছাড়া চীন থেকে ১৪ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯ ভাগ, পাকিস্তান থেকে ৮ ভাগ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৭ ভাগ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ৩ ভাগ। পর্যটনের অপার লীলাভূমি হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্বের খুব কম পর্যটকই পা রাখছেন বাংলাদেশে। তবে এই সময়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ ভ্রমণ করা পর্যটকের একটা বড় অংশই ছিল ইউরোপের।
বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ভ্রমণ পিপাসুরা সারা বছর অর্থ জমিয়ে কিছুদিনের জন্য ঘুরতে বের হয়। এই সময়ে দুই হাত খুলে খরচ করেন। তারা অনেক কিছু দেখেন, কেনেন, ঘুরে বেড়ান, বিভিন্ন সেবা নেন। একমাত্র দামি হোটেলে থাকা ছাড়া বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের খরচ করার জায়গাই নেই। বাংলাদেশে ভালো ভালো পর্যটন স্পট থাকলেও সেবায় আমরা পিছিয়ে। তাই বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট হচ্ছে না। যারা আসেন তারাও জমানো টাকা খরচ করে যেতে পারেন না।
এ ব্যাপারে পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমাদের পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভার থাকার পরও কেন বিদেশি পর্যটক আসছে না সেটা বুঝতে হবে। প্রথমত, আমাদের পর্যটন খাতের সেভাবে প্রচার নেই। আমাদের কী আছে, নতুন কী সুবিধা যোগ হলো সেগুলো জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিদেশি পর্যটকদের লাইফস্টাইল, তারা কোন সুবিধাগুলো চায়, এগুলো মাথায় রেখে পর্যটন খাত সাজাতে হবে। তাদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন হতে পারে। বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা বুঝে ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এ খাত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। এ জন্য সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।