স্টাফ রিপোর্টার॥
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেক বিভিন্ন উপায়ে কোম্পানি থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিয়োগ উঠেছে। এরই মধ্যে অর্থ আত্মসাতের মামলায় নজরুল ও খালেক গ্রেফতার হয়েছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট করা অর্থ আদায়ের জন্য ফারইস্ট লাইফের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলার শুনানি শেষে ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া এ বিমা কোম্পানির সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ও তার ছেলে রুবায়াত খালেককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জানা গেছে, ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা আলোচ্যসূচি ও সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এক্সট্রাক্ট বা প্রতিলিপি তৈরি ও ইস্যু করা হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানির বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা এমটিডিআর/আমানত সাবেক পরিচালক খালেক ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের বিপরীতে জামানত দিয়ে এবং ওই জামানত বাবদ কোম্পানির মোট এমটিডিআর ৮১৬ কোটি টাকা ব্যাংক কর্তৃক সমন্বয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। এ এমটিডিআর হালনাগাদ মুনাফাসহ এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
সাবেক পরিচালক ও চেয়ারম্যান তাদের নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে কম দামে জমি কিনে সেই জমি কোম্পানির কাছে বেশি দামে বিক্রি করে প্রায় ৬৬৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ২৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। এছাড়া কোম্পানির বিভিন্ন ক্রয় লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন খালেক ও নজরুল।
তাদের এসব অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম ও এম এ খালেকের নিয়ন্ত্রনাধীন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বাধীন পরিচালকের সমন্বয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয়।
এসব অনিয়ম তদন্ত করে উদঘাটনের জন্য বিএসইসি এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একাধিক নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব নিরীক্ষার মাধ্যমে এখনো পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ৫০০ কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম উদঘাটিত হয়েছে, যার সঙ্গে সরাসরি এ পরিচালকরা জড়িত ছিলেন।
এসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ প্রক্রিয়ায় কোম্পানির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্যাহ্ ও শেখ আব্দুর রাজ্জাকসহ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এবং এ অনিয়ম প্রক্রিয়ায় সহযোগী ছিলেন বলে মামলায় তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন- শাহরিয়ার খালেদ, রুবাইয়াত খালেদ, মো. তানভিরুল হক, নুর মোহাম্মদ ডিকন। তারা ফারইস্ট লাইফের পরিচালক থাকা অবস্থায় অর্থ আত্মসাৎ করতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন এবং নিজেরাও অর্থ আত্মসাৎ করেন।
সাবেক পরিচালক খালেক ও চেয়ারম্যান নজরুলকে অর্থ আত্মসাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠাদের তালিকায় নাম এসেছে, সাবেক সিইও আলী হোসেন, একরামুল আমিন, সিএফও ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর কবির, এএমডি অ্যান্ড ইনচার্জ অর্থ ও হিসাব (একক বিমা) কামরুল হাসান খান, ইভিপি অ্যান্ড ইনচার্জ ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট শেখ আব্দুর রাজ্জাক, জেইভিপি হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট মো. কামাল হোসেন হাওলাদার, ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের এফএভিপি মোহাম্মদ মাকবুল এলাহি প্রমুখের।