দেশের গ্যাস সংকট বিবেচনা করে সৌদি আরবে সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য শিগগিরই দেশটিতে সফর করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে জ্বালানি প্রাপ্তি ও সরবরাহের পাশাপশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সময়ে আমাদেরকে অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে। কোভিডের পাশাপাশি চলমান উইক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও সবসময় খাদ্য উৎপাদনে আরো মনযোগী হওয়ার বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়ে আসছেন।
চিঠিতে সালমান এফ রহমান বলেন, কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও বৃদ্ধি করার জন্য সার, বিশেষত ইউরিয়া সারের সরবরাহ বজায় রাখা ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। দেশে স্থাপিত সার কারখানাসমূহে উৎপাদিত সারের পাশাপশি বিপুল পরিমাণ ইউরিয়া সার বিভিন্ন দেশ হতে আমদানি করতে হয়। ২০২১ সালের জুনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাইড লাইন বৈঠকে সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ. আল-ফালিহ বাংলাদেশি অথবা যৌথ বিনিয়োগে সৌদি আরবে সার কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেদেশে স্থাপিত কারখানায় তারা গ্যাস সরবরাহ করতেও রাজি রয়েছে। এছাড়া উৎপাদিত সার বাংলাদেশে নির্ধারিত দামে পাঠানোর বিষয়েও তাদের সম্মতি রয়েছে। বিষয়টি প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করলে তিনি আমাকে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, সার কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশে ইতিপূর্বে প্রতিশ্রুত সৌদি-বিনিয়োগ প্রস্তাব কার্যকর করা এবং সম্ভাবনাময় নতুন বিনিয়োগ বিষয়েও তাদের সাথে আলোচনা হতে পারে। অধিকন্তু সৌদি-বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা সম্প্রসারণ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথেও সভা করা যেতে পারে।
এ প্রেক্ষাপটে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সার কারখানা স্থাপন, ইতোপূর্বে প্রতিশ্রুত সৌদি বিনিয়োগ কার্যকর করাসহ সার্বিক বাণিজ্য-বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।
এদিকে সরকারের এমন উদ্যোগকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সৌদি আরবে তেল সম্পদ ও গ্যাস সম্পদ আছে। তারা চাইলেই সেদেশে বাংলাদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ সম্ভব। যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অভ্যন্তরীণ গ্যাস ব্যবহার করে আমরা যদি সেখানে একটা ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি করি, তা কিনে আনতে পারবো। আবার প্রয়োজনের চেয়ে উৎপাদিত সার বেশি হলে তা বিশ^বাজারে বিক্রি করে দেওয়া যাবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি ৭ লাখ টন, ডিএপি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ও এমওপি ৭ লাখ ৫০ হাজার টন। ইউরিয়া সারের চাহিদার ২৬ লাখ টনের মধ্যে ৭ থেকে ১০ লাখ টন উৎপাদন হয় দেশে। বাকি চাহিদা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এমন বাস্তবতায় কৃষি উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে দেশে সারের যোগান বাড়ানো জরুরি। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যাস সংকট। এছাড়া গ্যাসের চাপ কমায় শিল্পখাতেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
তাই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলছে, শিল্পখাতে গ্যাসের সরবরাহ ঠিক না থাকলে উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় নতুন সার কারখানা নির্মাণের সুযোগ কম। তাই ব্রুনাই, কাতার ও সৌদি আরবের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশে কারখানা স্থাপন করে সার আনা যায় কিনা, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ আর ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি করা উচিত নয়। কেননা আমাদের গ্যাসের স্বল্পতা রয়েছে। বাংলাদেশের উচিত এখন সৌদি-কাতার-ইরান বা ব্রুনাইতে ফ্যাক্টরি করা।’