এফবিডি ডেস্ক॥
আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে করসেবা মাস। করসেবা মাস শেষ হলে রিটার্ন দাখিল করতে করদাতাদের গুনতে হবে জরিমানা। জরিমানা এড়াতে শেষ সময়ে এসে লাইন ধরে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন করদাতারা। রিটার্ন দাখিলের চাপ বাড়ায় দম ফেলানোর ফুরসত পাচ্ছেন না কর কর্মকর্তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কর্মকর্তা বলেন, আশা করেছিলাম এ বছর করদাতারা আগেভাগেই রিটার্ন দাখিল করবেন। এনবিআর থেকে সে জন্য আহ্বানও জানানো হয়েছিল। তবে করসেবা মাস শুরুর পর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত করদাতাদের তেমন একটা সাড়া পাইনি। প্রতিবছরের মতো শেষ সময়ে করদাতারা রিটার্ন দাখিল করতে আসছেন। এতে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। দম ফেলানোর সময় পাচ্ছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা জানান, এখনও ৭০ শতাংশ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেনি। তাদের রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে সময় বাড়ানো যায় কি না সেটা বিবেচনা করছে এনবিআর। তবে এটা শেষের দিন এনবিআর থেকে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। কারণ এখনই ঘোষণা দিলে রিটার্ন দাখিল আবার কমে যাবে। তারা শেষ দিনের অপেক্ষায় থাকবে।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৮০ লাখের বেশি করদাতা ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন নিলেও এখনও কাক্সিক্ষত রিটার্ন দাখিল হয়নি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের ৩১ কর অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ রিটার্ন দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে ই-রিটার্ন দাখিল হয়েছে এক লাখের বেশি। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ১, ৫, ৭, ৮, ১০ ও ১১ নম্বর কর অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বুথের সামনে দীর্ঘ লাইনের সারি। একে একে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন করদাতারা। অনেকে অফিসের তাড়াহুড়োর কারণে চেষ্টা করছেন সামনের জনকে ম্যানেজ করে আগে রিটার্ন জমা দিতে। রিটার্নের কাগজপত্রাদিতে ভুল থাকলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কর কর্মকর্তারা। যাদের কাগজে কোনো ভুল নেই তারা কয়েক মিনিটের মধ্যেই রিটার্ন জমা দিতে পারছেন।
কর অঞ্চল-৫ এ রিটার্ন জমা দিতে আসা শফিকুর রহমান বলেন, ‘অফিস থেকে ১ ঘণ্টার ছুটি নিয়ে এসেছি রিটার্ন জমা দিতে। ৩০ তারিখের পর রিটার্ন জমা দিলে জরিমানা দিতে হবে। তাই দীর্ঘ লাইন উপেক্ষা করেই রিটার্ন জমা দিচ্ছি। করমাস শুরু হওয়ার পরই আসা দরকার ছিল তাহলে এত সময় লাগত না।’ নাসিমা খাতুন তার স্বামীর রিটার্ন জমা দিতে কর অঞ্চল-১১ তে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আরও আগেই রিটার্ন জমা দেওয়ার কথা ছিল। অফিসের ব্যস্ততার কারণে এতদিন উনি (স্বামী) আসতে পারেননি। এখনও ব্যস্ততা শেষ হয়নি। তাই আমাকে রিটার্ন জমা দিতে পাঠিয়েছেন। এখানে এসে দেখি প্রচুর ভিড়। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমা দিতে পেরেছি।’
করদাতাদের সুবিধার্থে নভেম্বরে মাসজুড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস চলাকালে নিরবচ্ছিন্নভাবে মেলার পরিবেশে করসেবা দেওয়া হচ্ছে। যেখানে রয়েছে হেল্প ডেস্ক, রিটার্ন গ্রহণ বুথ, ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন ও এ-চালানের আলাদা বুথ। করদাতারা রিটার্ন তৈরি করে মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে অনেকে রিটার্ন পূরণ করছেন। এখানে সব ধরনের ফরম বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
যত সময় যাচ্ছে করদাতাদের চাপ তত বাড়ছে। আশা করছি, আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
এ ছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। চলতি অর্থবছর থেকে শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে না, বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে।
আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২৩ অনুযায়ী, ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে কারণে রিটার্ন দাখিলের বিকল্প নেই ই-টিআইএনধারীদের।