সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন

গ্রামীণ ব্যাংক নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ৯.৩০ এএম
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলেছে গ্রামীণ ব্যাংক। এক কোটির বেশি প্রান্তিক ও গ্রামের হতদরিদ্র গ্রাহকের এই ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমছে। মোট ২ হাজার ৪৯৬টি শাখার মধ্যে ৯৯ শতাংশই এখন মুনাফা করছে। আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। অন্যান্য সূচকেও ভালো করছে ব্যাংকটি।

এক সাক্ষাৎকারে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে এসব কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রহিম খান।

তিনি বলেছেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংক অবদান রেখে চলেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহ করা। যাত্রার শুরু থেকে দেশের আর্থসামাজিক খাতে উন্নয়নে ব্যাংকটির ভূমিকা অতুলনীয়। গ্রামীণ ব্যাংক প্রান্তিক ও গ্রামের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে তাদের অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা। কারণ, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর মাঝে ক্ষুদ্র ঋণের চাহিদা ব্যাপক। ফলে সবাই ব্যাংকের কাছে যায়, আর গ্রামীণ ব্যাংক এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে যায় অর্থনৈতিকভাবে সচল করার জন্য।

আবদুর রহিম বলেন, বর্তমানে দেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে এই আর্থিক সংকটের মধ্যেও দরিদ্র জনগোষ্ঠী গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। এ ছাড়া সার্বিক দিক থেকে ২০২২ সালে সব সূচকে অগ্রগতি হয়েছে ব্যাংকটির। চলতি বছর শুরুতে নতুন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আগে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের কিস্তি ছিল শুধুমাত্র সাপ্তাহিক। এখন সাপ্তাহিকের পাশাপাশি মাসিক কিস্তিও চালু হয়েছে। একে বিশেষ ঋণ কর্মসূচিও বলা হয়। ধারাবাহিকভাবে এ ঋণের চাহিদা জোগান দেয়া হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের মধ্যে এসব ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে দেয়া হয়। বিতরণ করা এসব জনগোষ্ঠী সবাই সব কাজে পারদর্শী নন। সবাই এক কাজে ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারবেন না। ফলে আমাদের কর্মকর্তারা এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে চাহিদা মোতাবেক ঋণ প্রদান করেন।

তিনি বলেন, ‘কৃষি, গবাদিপশু পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, খাতভিত্তিক ব্যবসা, হাঁস-মুরগি পালন থেকে একেকজন একেক রকম কাজে পারদর্শী। ফলে এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে থাকে। আবার ঋণ দেয়াতেই গ্রামীণ ব্যাংক সীমাবদ্ধ থাকে না। এসব ঋণ তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করছে কি না, সেদিকেও লক্ষ্য রাখেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। আমাদের পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে অর্থ বিতরণ করার পর এটি নিয়ে তারা ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করছেন। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় একটি পরামর্শ থাকে যেন মাস শেষে তারা কিছু টাকা ব্যাংকে আমানত হিসেবে সঞ্চয় করুক।’

চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকে ব্যক্তি সঞ্চয় নামে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে গ্রাহকের সাধ্য অনুযায়ী টাকা রাখতে পারবেন। কোনো গ্রাহকের টাকার দরকার পড়লে যেকোনো সময় এ টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির আমানত স্থিতি ২৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে আমানত নিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৫১। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের আদায়যোগ্য ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকের বর্তমান আমানত আদায়যোগ্য ঋণের চেয়ে ১ হাজার ২১১ কোটি টাকা বেশি। গ্রামীণ ব্যাংকের ১ কোটি ঋণগ্রহীতা সদস্যের মধ্যে ৬৯ শতাংশ দারিদ্র্য বিমোচন করতে সক্ষম হয়েছে।’

আবদুর রহিম বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ১৫ ধরনের ক্যাটাগরিতে ঋণ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে সহজ ঋণ, বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ, সেতু ঋণ, বিশেষ ঋণ, নবীন উদ্যোক্তা ঋণ, পশুঋণ, গৃহঋণ, চুক্তিঋণ, উচ্চশিক্ষা ঋণ, সংগ্রামী (ভিক্ষুক) সদস্যের ঋণ, সুপরিসর কেন্দ্রঘর নির্মাণ ঋণ, নার্সিং শিক্ষাঋণ, পুঁজি সহায়ক ঋণ, শস্যঋণ ও মৌসুমি ব্যবসা ঋণ। ব্যাংকটিতে গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ।

‘গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ এসব সদস্যকে আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। চলতি বছর প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ২১৭ কোটি টাকার মন্দ ঋণ আদায় করা হয়েছে। ২ হাজার ৫২৮টি শাখার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।’

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com