এফবিডি ডেস্ক॥
এতে বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০ বন্দরের বৈশ্বিক তালিকা থেকেও চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের অবনতি ঘটবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকট, এলসি খোলায় ব্যাংকের কড়াকড়ি, সর্বোপরি বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার পরিবহনে ফের তিন মিলিয়নের ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ছে। ২০২২ সালে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে কন্টেইনার পরিবহন সংখ্যা ৩০ লাখের মাইলফলক অর্জন করতে পারবেনা বলে জানিয়েছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০ বন্দরের বৈশ্বিক তালিকা থেকেও চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের অবনতি ঘটবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকট, এলসি খোলায় ব্যাংকের কড়াকড়ি, সর্বোপরি বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার)। যা প্রতি মাসে গড়ে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৭ টিইইউস। সে হিসেবে বছর শেষে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হতে পারে ২৮ লাখ ৪৩ হাজারের কিছু বেশি।
অর্থাৎ এ বছর তিন মিলিয়ন ক্লাব থেকে ছিটকে যাচ্ছে বন্দর। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ২৯ লাখ ৪৫ হাজার টিইইউস।
কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে পিছিয়ে যাওয়া মানেই বৈশ্বিক ক্রমতালিকা থেকেও বন্দরের অবস্থান পিছিয়ে যাওয়া। কারণ লয়েডস লিস্টে ক্রমতালিকা করা হয় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং পরিসংখ্যানের উপর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহ অন্যান্য কারণে সারা বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে। বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে বিগত কয়েক মাসে কন্টেইনার পরিবহন কমেছে। বছর শেষে হিসেব করে বোঝা যাবে লয়েডস লিস্টে বন্দরের অবস্থান কী হয়।”
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, “ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের ব্যবসা বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। এই চিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়। সারা বিশ্বের চিত্র একই।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। বর্তমান দুঃসময়ে যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে না।”
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর ৩ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের রেকর্ড করে। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে কম হ্যান্ডেলিং হওয়ার কারণে ৩ মিলিয়ন ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ে দেশের এই কন্টেইনার বন্দর। ২০২০ সালে বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছিলো ২.৮৩ মিলিয়ন কন্টেইনার। লয়েডস লিস্টে ৫৮তম স্থান থেকে পিছিয়ে ৬৭তম তে চলে যায় বন্দর।
তবে ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথম অপারেশনে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালে বন্দর ৩.২১ মিলিয়ন কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে। এর ফলে ২০২১ সালে লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৩ ধাপ এগিয়ে ৬৩ তম স্থানে আসে।
২০২২ সালে এসে পরিস্থিতি বদলে যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ধস নামে। ডলার সংকটে কমে যায় আমদানি-রপ্তানি। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রমাগত কমতে থাকে আমদানি-রপ্তানি।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ও ক্লিফটন গ্রুপের সিইও মোঃ এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে ব্যবসা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কমে গেছে। ২০২৩ সালের মে মাসের আগে রপ্তানি স্বাভাবিক হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছিনা।”