এফবিডি ডেস্ক॥
প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে প্রতি বছর জিডিপির সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
পিআরআই বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি টার্গেট পূরণ করতে বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সঙ্গে সরকারকে আরও অতিরিক্ত ৮০০ কোটি থেকে এক হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগান দিতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, অষ্টম-পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে ২০২২ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে। এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সরকারকে প্রতি বছর জিডিপির সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু এই বিশাল অঙ্কের অর্থ কোন খাত থেকে আসবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নেই সরকারের। ফলে এসডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বড় লোকদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়পত্র থেকে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছে না। তা ছাড়া যতদিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ হার থাকবে ততদিন দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নতি হবে না। এ জন্য উচ্চহারে সুদ দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত না বলে অভিমত দিয়েছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ হয় তার ৭০ শতাংশের বেশি ধনীদের। ফলে সরকার যে উচ্চ সুদ দিচ্ছে সেই অর্থ যাচ্ছে সরকারি আমলা ও উচ্চ ধনী ব্যক্তিদের পকেটে।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তাদের কারণেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সম্ভব হয় না। আমাদের একটা গবেষণায় দেখেছি ৭০ শতাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনেন ধনীরা। যতদিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হার থাকবে ততদিন বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করবে না।
কর-জিডিপির হার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কর-জিডিপির রেশিও দিন দিন কমছে। আগামীতে আরও কমবে। কর-জিডিপির রেশিও ১২ শতাংশ থেকে কম সাড়ে ৭ শতাংশ হয়ে গেছে।
ড. এম আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকার যে রাজস্ব আয় করে তার ২০ শতাংশই সুদ পরিশোধের জন্য ব্যয় করতে হয়। সরকারের এই সুদ ব্যয় কমাতে হলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে হবে। উচ্চ হারে সুদে দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া উচিত না। সঞ্চয়পত্র দিয়ে বড় লোকদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের বদলে অন্য জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
তিনি বলেন, ইউনিসেফের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষা খাতে তার মোট জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই খাতেই বরাদ্দের হার ১ শতাংশ। এটা বাড়াতে হবে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মতে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে ৫ শতাংশ। আমাদের দেশে বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। মানদণ্ড অনুযায়ী খুবই নগণ্য। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ খুবই কম। যা দেওয়া হচ্ছে সেখানে রয়েছে অনিয়ম ও বৈষম্য। এই বরাদ্দ বাড়াতে রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বর্তমান কর আহরণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ হারে এটা ন্যূনতম ২০ শতাংশে উন্নিত করতে হবে।