রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ক্রসবার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার গাড়ি পারাপার: টোল আদায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত, আহত তিন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত দুই ফুট বাঁধই ভরসা, আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত কাটে খুলনা উপকূলবাসীর খুলনা অঞ্চলের ভরত ভায়না দেউল হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র খুলনায় সড়ক বিভাগের বাধায় বন্ধ কেসিসির ৭ মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সাবেক এমপি আজিজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় বাড়ল ভিড়, ছড়াল উচ্ছ্বাস

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১.৫৩ এএম
ছবি: সংগ্রহীত

দর্শনার্থীদের বেশির ভাগকেই মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ছবি তুলে সময় কাটাতে দেখা গেছে।

ডেস্ক রিপোর্ট॥

বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচলে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে।

পহেলা জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরুর রেওয়াজ থাকলেও এবার বাধ সাধে নির্বাচন। তিন সপ্তাহ পিছিয়ে গত রোববার থেকে শুরু হওয়া মেলা জমে ওঠে ষষ্ঠ দিন, ছুটির বিকালে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণা শুরু হয়, তবে ভিড় বাড়তে থাকে দুপুরের পর। রাজধানীর পাশাপাশি অবস্থানগত কারণে আশেপাশের জেলার বিপুল দর্শনার্থীর সমাগম দেখা গেছে এদিন।

নরসিংদী থেকে মেলায় পরিবার নিয়ে এসেছেন জামাল হোসেন।  তিনি বললেন, “আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলা যখন হত- বেশ কয়েকবার গিয়েছি। পূর্বাচলে মেলা শুরু হওয়ার পর এবারই প্রথম এসেছি। আসতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

“ম্যারাথনের কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে কিছুটা জ্যাম ছিল। মেলা ঘুরে মনে হয়েছে, আগারগাঁওয়ের তুলনায় পূর্বাচলেই বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা ভালো হয়েছে।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা হত শেরেবাংলা নগরে। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২১ সালে মেলা করা যায়নি। এরপর মহামারীর বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা চলে যায় পূর্বাচলে।

রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন ব্যাংকার শাহেদ সারোয়ার। তার জন্য দূরত্ব বেড়েছে; তবে আগ্রহে ভাটা পড়েনি, কমেনি আনন্দও।

শাহেদ বলছিলেন, “ধানমন্ডি থেকে সিএনজি নিয়ে প্রথমে কুড়িল বিশ্ব রোড এসেছি। তারপর বিআরটিসির শাটল বাসে করে বাণিজ্য মেলায় এসেছি, ৩৫ টাকা প্রতি জনের টিকেট রেখেছে বাসে।

“আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। ঘোরার পাশাপাশি মেলায় কেনাকাটাও করব। একসাথে সব পণ্য পাওয়া যায়, এটাই আসলে আনন্দের ব্যাপার।”

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলার প্রধান ফটকে লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। কাউকে দেখা গেছে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, কেউবা এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। আবার কেউ কেউ ঘুরছেন একাই।

অধিকাংশ দর্শনার্থীকে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ছবি তুলে সময় কাটাতে দেখা গেছে। আবার অনেককে পছন্দের পণ্য খুঁজেছেন, কেউ কেউ কেনাকাটাও সেরেছেন।

ক্রোকারিজের দোকান ‘নিক্কেই জাপান’ এর বিক্রয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থতি বেশ ভালো। মানুষ এলে তো কেনাকাটা করে। আমরা গত ৮ বছর ধরে বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছি। আমাদের দোকানে মূলত ক্রোকারিজ আইটেম।”

কোন পণ্যে ক্রেতার আগ্রহ বেশি, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে প্যাকেজ অফার চলছে। এগুলা ভাই সংসারের আইটেম। নারীরা সব কিছুই নেয়, যার যেটা প্রয়োজন।”

মেলায় আবিদ কর্পোরেশনের শিশু পার্কে উচ্ছ্বাস দেখা গেল বাচ্চাদের। দর্শনার্থী বাড়ায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের চাপ সামলাতে হচ্ছে বেশি।

আবিদ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আজকে মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশ ভালো। মেলায় এ বছর আমরা শিশু পার্কটি ভিন্ন রূপে সাজিয়েছি। নতুন-নতুন রাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য আলাদা জোন করা হয়েছে।

“আমাদের এখানে বড় রাইডের সংখ্যা প্রায় ১০টি। ছোট-ছোট রাইড আছে ২০ থেকে ৩০টি। বড়দের এবং বাচ্চাদের জন্য ডল ক্যাচার, গিফট শপ, চকোলেট মেশিন ইত্যাদি নতুন-নতুন রাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঘোড়া আছে, ট্রেন আছে, কোস্টার আছে।”

সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় গুনতে হচ্ছে এসব রাইডে।

বিক্রেতারা বলছেন, মেলা শুরুর পর থেকে শুক্রবার দর্শনার্থী যেমন বেড়েছে, তেমন বিকিকিনিও বেড়েছে।

পোলার আইস্ক্রিমের বিক্রয় প্রতিনিধি সামিয়া আফরিন বলেন, “এবার তো এমনিতেই মেলা দেরি করে শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে শীতও ছিল বেশি।

“তাই শুরুর দিকে তেমন একটা দর্শনার্থী হয়নি। তবে আজ শুক্রবার বন্ধের দিন উপলক্ষে দর্শনার্থী অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।”

স্টল নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি

মেলা শুরুর পর ষষ্ঠ দিন গড়ালেও এখনও স্টল নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। স্টল নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, মেলায় প্রতিবারই কিছু স্টল বসতে দেরি হয়। ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে স্টল দেবে কি দেবে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন স্টল বরাদ্দ নিয়ে লাভ করে আরেকজনের হাতে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব কারণে প্রতিবারই কিছু স্টল নির্মাণে দেরি হয়ে যায়।

দেড় দশক ধরে বাণিজ্য মেলায় স্টল তৈরির কাজ করে আসছেন মিরপুরের ব্যবসায়ী নিতাই সূত্রধর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছরই বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে মিস্ত্রি ভাড়া করে স্টল তৈরির কাজ করি। আমার অধীনে আট থেকে ১০ জন মিস্ত্রি এবার কাজ করছে।”

তার মত এমন আরো ২০ থেকে ২৫ জন ঠিকা ভিত্তিতে স্টল তৈরির কাজ করেন বলে জানান নিতাই।

এবারকার মেলার স্টল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে জানিয়ে তিনি বলেন, “৮০ থেকে ৮৫ ভাগ কাজ শেষ। কয়েকটি স্টল তৈরির কাজ এখনও চলছে৷ সেগুলো আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”

নিতাই সূত্রধর জানান, একেকটি স্টল তৈরি করতে ৪০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি৷ তবে মেলা শেষ হলে এসব স্টল খুলে নিয়ে যান। এবার গোটা বিশেক স্টল তৈরি করেছেন এই কাঠমিস্ত্রি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১টি, গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩৩১।

মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া খাবারের দোকানগুলোতে নিয়মিত তদারকি কছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় প্রবেশমূল্য বেড়েছে। এবারের মেলায় প্রবেশের টিকেট মূল্য বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ৩০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

মেলায় দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য বিআরটিসির ৬৪টি শাটল বাস চালু আছে। এই বাসে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। আর ফার্মগেইট থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com