৬ জন অভিষিক্ত নিয়ে নতুন চেহারার দক্ষিণ আফ্রিকা দল শুরুটা ভালো করলেও দুইশ ছাড়ানো জুটিতে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নিউ জিল্যান্ড।
স্পোর্টস ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশে টেস্ট ক্যাপ পেলেন ৬ ক্রিকেটার। তাদের একজন, শেপো মোরেকি প্রথম বলেই নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে। ৩০ বছর বয়সী পেসার টেস্ট অভিষেকে প্রথম বলেই স্বাদ পেলেন উইকেটের। খর্বশক্তির দল নিয়ে প্রোটিয়ারা শুরুতে নাড়িয়ে দিল নিউ জিল্যান্ডকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন উইলিয়ামসন ও রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিতে ঠিকই দিনটা নিজেদের করে নিল কিউইরা।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম দিনে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডের রান ৮৬ ওভারে ২ উইকেটে ২৫৮।
বিরতির পর ফেরার ম্যাচে বড় স্কোর গড়ার ধারা এবারও ধরে রাখলেন উইলিয়ামসন। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট কাটিয়ে ফেরা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান দিন শেষে অপরাজিত ২৫৯ বলে ১১২ রান করে।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩০টি টেস্ট সেঞ্চুরি স্পর্শ করলেন উইলিয়ামসন। ২০টি শতরানও নেই তার দেশের আর কারও।
কিউইদের সেরা ব্যাটসম্যানের নতুন উচ্চতায় ওঠার দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে নিজেকে রাঙালেন রবীন্দ্র। ক্যারিয়ারে আগে তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে সাত-আট নম্বরে খেলে তার মোট রান ছিল ৭৩, সর্বোচ্চ ১৮। এবার হেনরি নিকোলসের বদলে প্রথমবার চার নম্বরে সুযোগ পেয়ে ২১১ বলে ১১৮ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ২৪ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
দুইজনের ২১৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে চাপা পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুর সাফল্য।
মূল ক্রিকেটারদের সবাই এসএ টোয়েন্টিতে ব্যস্ত থাকায় বিকল্প দল নিয়ে এই সফরের দল সাজিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই টেস্টের একাদশের সবার সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ৫১ টেস্টের। সেখানে কিউইদের উইলিয়ামসন ও সাউদি খেলতে নেমেছেন তাদের ৯৭তম টেস্ট।
টেস্ট ইতিহাসের ৩৫তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষেকে অধিনায়কত্ব করতে নামা নিল ব্রান্ড টস ভাগ্যকে পক্ষে পান। বোলিংয়ে নেমে শুরুতে সাফল্যের দেখাও মেলে তাদের।
ম্যাচের দ্বিতীয় আর মোরেকির প্রথম ওভারের প্রথম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ডেভন কনওয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ বোলার হিসেবে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলে উইকেটের কীর্তি গড়েন তিনি।
গত মাসেই অস্ট্রেলিয়াতে একই নজির গড়েন ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার শামার জোসেফ। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নেওয়া বোলার হলেন এখন মোট ২৪ জন।
উইকেটে তখনও প্রাণের ছোঁয়া ছিল বেশ। সহায়ক উইকেটে উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথামের পরীক্ষা নেন মোরেকি। তিন দফায় উইলিয়ামসনকে পরাস্ত করেন তিনি ১৫ বলের মধ্যে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ষোড়শ টেস্ট খেলতে নামা পেসার ডুয়ানে অলিভিয়ের বেশ সিম মুভমেন্ট আদায় করে উইকেট থেকে।
প্রথম ঘণ্টায় অবশ্য আর উইকেট ধরা দেয়নি। প্রথম পরিবর্ত বোলার ডেন প্যাটারসন এসে ফিরিয়ে দেন ২০ রান করা ল্যাথামকে।
উইলিয়ামসন তখনও স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। রবীন্দ্র ক্রিজে যাওয়ার পরপরই পুল শটে ছক্কায় ওড়ান মোরেকির শর্ট বল। তবে শুরুটা খুব স্বস্তিময় ছিল না তারও। কয়েক দফায়তার ব্যাটের কানায় লাগে বল।
দুজনের কেউই অবশ্য হাল ছাড়েননি। দক্ষিণ আফ্রিকার আঁটসাঁট বোলিংয়ের সামনে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকেন দুজন। দ্বিতীয় সেশনে ২৭ ওভারে রান আসে মাত্র ৬০। দুজনের কেউ ঝুঁকির পথে হাঁটেননি।
৪৫ রানের অবশ্য রুয়ান দু সুয়াতের বলে সুযোগের মতো দিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। পেছন দিকে দৌড়ে ক্যাচ নিতে পারেননি এডওয়ার্ড মুর।
ক্রমে উইকেট সহজ হয়ে আসে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ক্লান্তি পেয়ে বসে। উইলিয়ামসন ও রবীন্দ্র সময়ের সঙ্গে নিজেদের খুঁজে পেয়ে বাড়াতে থাকেন রান। এই জুটি থামানোর পথ আর পায়নি অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকা দল।
মোরেকিকে পুল করে চার মেরে উইলিয়ামসন শতরানে পা রাখেন ২৪১ বলে। পরের ওভারেই রবীন্দ্র তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ১৮৯ বলে।
দিনের শেষ ভাগে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েও সুবিধে করতে পারেনি প্রোটিয়ারা। নতুন বলের প্রথম ওভারেই দুজন দুটি বাউন্ডারি মারেন মোরেকিকে। এই পেসারের বলেই পরে টানা দুই বাউন্ডারি মারেন রবীন্দ্র। দিনের শেষ ওভারেও বাউন্ডারি দিয়ে উইলিয়ামসন শেষ করেন কর্তৃত্বের ছাপ রেখেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ২৫৮/২ (ল্যাথাম ২০, কনওয়ে ১, উইলিয়ামসন ১১২*, রবীন্দ্র ১১৮*; অলিভিয়ের ১৯-৩-৬২-০, মোরেকি ২২-২-৮১-১, প্যাটারসন ২২-৩-৫৯-১, দু সুয়াত ১৪-৪-২৪-০, ব্রান্ড ৯-০-৩১-০)।