রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

ইরানে বিমান হামলার গোপন প্রস্তুতি ইসরায়েলের

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৪.৪২ পিএম
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক॥

ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এখন ইসরায়েল পাল্টা হামলা করবে নাকি অন্য কোনো পথে হাঁটবে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। এ বিষয়ে ‘এন্ড টাইম সিক্রেটস’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ভিডিওটি এরই মধ্যে ৪২ হাজার ভিউ হয়েছে।

এতে বলা হচ্ছে- ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলার গোপন ছক কষছে। ইরান থেকে ৭০ হাজার অনুসারী বের হওয়ার কথা রয়েছে। ইরান যেসব মিসাইল ছুড়েছিল তার বেশকিছু ভূপাতিত ইসরায়েল। ইসরায়েলে পক্ষে সৌদি আরব কাজ করেছে বলেও জোর আলোচনা চলছে। যদিও সৌদি আরব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আবার সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, তারা ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

অন্যদিকে, আল্ট্রা অর্থড্রক্স ইহুদিদের একটা শাল নিয়ে কথা উঠেছে। বলা হচ্ছে, তারা যে শালটি পরে সেটি দেখলেও বোঝা যায় যে, ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে। ইসরায়েল তাদের সেনাবাহিনীতে অন্যতম একটা পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছে। প্রথমে আমাদের দেখতে হবে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনোরকম ভেতরে ভেতরে বন্ধুত্ব আছে কিনা, এটা অনেকে বলার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে যারা সুন্নি তারা বলে থাকেন।

ইতিহাস বলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের বরাবরের মতো ভালো সম্পর্ক ছিল সেই ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। সুতরাং, প্রথমে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন ইরান স্বীকৃতি দেয়। পরে দুটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। তখন ইরানের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী। তিনি ওয়েস্টার্ন ব্যাকড একজন নেতা, তিনি ওয়েস্টার্নদের পক্ষে কাজ করেন। তখন ইসরায়েল ইরান একে অপরকে সাহায্য করত। ইরানকে ইসরায়েল কৃষিকাজে সহায়তা করত। তাদেরকে সেনাদের ট্রেনিং দিত। এমনকি ইসরায়েল ইরানের যে আর্মড ফোর্সেস রয়েছে, তাদেরকেও ট্রেনিং দিত। বিনিময়ে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী ইসরায়েলকে তেল দিতেন। কারণ, ইসরায়েলের তেল দরকার।

এরই মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে যায়। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি তার যে অনুসারী ধরা হয়, তারা ১৯৭৮ সালে রেক্স সিনেমা হল পুড়িয়ে দেন। তখন রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে ইসলামিক রেভ্যুলেশন তৈরি হচ্ছিল। সে সময় থিয়েটার পোড়ানোর ঘটনায় ৩৭৭ জন মারা যান। তখন পৃথিবীজুড়ে একটি ত্রাস সৃষ্টি হয়। তখন ইরানে থাকা ইহুদিরা নড়েচড়ে বসে। তারা মনে করে- সামনে তাদের বিপদ দেখা যাচ্ছে।

ইরান একসময় ইসরায়েলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। প্রায় ২০ হাজারের ওপরে ইহুদি রয়েছে সেখানে। এসব ঘটনার পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ক্ষমতা নিয়ে নেন। তখন ইহুদিদের সঙ্গে একটা চুক্তিও হয়। চুক্তিটা কেমন ছিল তা প্রকাশ্যে বলে দেওয়া হয়। বলা হয়- তোমরা যদি ইরানে থেকে কোনো গুপ্তচরবৃত্তি বা ইসলামিক রেভুলেশনের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করো, তাহলে তোমাদের সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে। যা সিনেমা হলে দেওয়া আগুনে ৩৭৭ জন আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল। তখন ইহুদিরা রাজি হয়ে যায়, তখন তারা ভয়ে ভয়ে ইরানে থাকতে থাকতে শুরু করে। এরপর ইরানের সঙ্গে ইসারায়েলের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। তখন ইরান ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা শুরু করে। অনেকেই বলে- ইরান মূলত ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি মেজরিটি সমর্থন আদায় করতে চায় এবং ইসলামিক ওয়ার্ল্ডে ইরান নেতৃত্ব দিতে চায়। অনেকে এও বলে যে, ইরান এটি মন থেকে করছে।

এরপর ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব বড় আকার ধারণ করে ১৯৮২ সালে, যখন সাউদার্ন লেবাননে ইসরায়েল তাদের সৈন্য পাঠায়। তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ বাঁধলে ইরান তাদের শিয়া জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে সৈন্য পাঠায়, তখন দ্বন্দ্ব চরমে চলে যায়। তখন বিশ্বব্যাপী দেখা যায় ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে দা-কুমড়ার সম্পর্ক প্রকাশ পায়। ইরান তখন ভেতরে ভেতরে ইসরায়েলের চারদিক থেকে রিং অব এনিমিজ তৈরি করতে থাকে। যেখানে শিয়া স্বার্থ রয়েছে, সেখানে ইরান ফান্ডিং করে এবং ইসরায়েলের চতুর্দিকে যেমন ইয়েমেনে রয়েছে, লেবাননে হুতি হিজবুল্লাহ ও গাজায় রয়েছে হামাস। সবাইকে ইরান ফান্ডিং করে। অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। এছাড়াও ইরাক সিরিয়া লিবিয়া সবখানে ইসরায়েলবিরোধী যেসব জোট রয়েছে, তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করে ইরান। এটা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।

ইসরায়েল কিন্তু বসে নেই। ইরানের হাসান নাসরুল্লাহর পর সাম্প্রতিক হামলায় সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। তারা কিন্তু একের পর এক এগুলো করে যাচ্ছে। ইরানকে পিষে ফেলতে চাইছে। ইরান তাদের নিউক্লিয়ার অগ্রগতি ধামাচাপা দিতে চাইলেও ইসরায়েল জানে যে, ইরান নিউক্লিয়ার অস্ত্র বানানোর দ্বারপ্রান্তে। যখনই দেখা যায়- ইরান একটু এগিয়ে যায়, তখন হঠাৎ করে ইসরায়েলে হামলা শুরু হয়ে যায়।

ইসরায়েলের সব থেকে বেশি ভয় হয় ইরান আমেরিকার সঙ্গে যখন কোনো বৈঠকে বসে। তারা মনে করে, আমেরিকার সঙ্গে তাদের কোনো আঁতাত হয়ে যেতে পারে। রয়টার্স একটা রিপোর্ট করেছিল- মাত্র পাঁচজন আমেরিকান বন্দি ছিল ইরানের কাছে, তাদেরকে ছয় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ছাড়ানো হয়েছিল এবং ইরানকে বলা হচ্ছিল- তারা এভাবেই পশ্চিমাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে।

সাম্প্রতিক খবর হলো- ইরানের যেসব নিউক্লিয়ার সাইট রয়েছে, ইসরায়েল সেগুলোতে আক্রমণ করবে যেকোনো মুহূর্তে। ইরানকে কিন্তু ইসরায়েল অনেকভাবে আটকে রাখতে চাইছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্ট্রাইক করা, অভ্যন্তরীণ সমস্যা তৈরি করা। ইরানে কিছুদিন পরপর হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সেখানকার রিলিজিয়াস পুলিশ রয়েছে, তারা সেটা সামাল দিতে হিমশিম খায়। এমনকি সাম্প্রতিক সময় দেখা গেছে, ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আজাদিয়া স্কয়ার, সেখানেও তাদের যে ইসলামিক রেভ্যুলেশনের বিপক্ষে স্লোগান দিতে। তার মানে, ইরানে যে সরকার রয়েছে সে বড় ধরনের বিরোধিতার মুখে রয়েছে। চলমান সময়ের কিছু ঘটনা দেখলে অবাক হতে হয়- সেখানকার দ্বন্দ্ব মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে।

ফয়েজা হাশেমি রাফসানজানি ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানির মেয়ে। তিনি একটি লজিক দেখিয়েছেন, বলছেন যে, ইরান উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন করা চায়নার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে। রাশিয়ায় মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে, কিন্তু একই কথা বলে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন করা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক কেন ভালো করছে না?
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক সাদেক জিবাকালাম বলছেন, ইরানের যে ইসরায়েলবিরোধী পলিসি রয়েছে, তা বাতিল করা উচিত। এতে ইরান বিশ্বব্যাপী একঘরে হয়ে গিয়েছে।

ঐ ভিডিওতে বলা হয়- ইরানের জনগণ কি আসলে তাদের শাসকদের সমর্থন করে নাকি তারা ইসলামিক যে রেভ্যুলেশন রয়েছে তাদের পক্ষে রয়েছে? ব্যাপারটা কিন্তু নড়েচড়ে বসছে। গত ঈদে ইরানের সুন্নি মুসলিম ইরানের কারেন্ট রেজিমের বিপক্ষে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে- আমাদের যে রাইটস রয়েছে তা আমরা পরিপূর্ণরূপে পাচ্ছি না। সুন্নি আলাদা কোনো মসজিদ নেই, বিভিন্নভাবে তাদের ওপর দমন-নিপীড়ন চলে তা একটি রিপোর্টেও উঠে এসেছে।

মূল জনসংখ্যার ১০ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। সুন্নি মুসলিমদের দেখা যাচ্ছে তারা সরকারবিরোধী। সম্প্রতি ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে যে আক্রমণ হয়েছে, সে ঘটনায়ও দুই ভাগে বিভক্ত। আরেকটি রিপোর্টে দেখা গেছে, ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা তাদের দেশের অধিকাংশ জনগণ সমর্থন করছে না। কারণ, পশ্চিমাদের সঙ্গে তাদেরও ওঠাবসা রয়েছে। এ ঘটনায় ইসরায়েলের পক্ষেও একটি বড়সড় জোটের উত্থান হচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে মারাত্মক একটি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ইসরায়েলে দেখা যেত- সেখানকার আর্মিতে সেকুলার জনগণ ছিল মেজরিটি, কিন্তু এখন বলা হচ্ছে- আর্মিতে আরো জনগণ দরকার। এখন আল্ট্রা অর্থড্রক্স যে ইহুদি রয়েছে, তাদেরকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যদিও অনেকে বলছেন, আল্ট্রা অর্থড্রক্স ইহুদিরা হচ্ছেন হিন্দুদের ব্রাহ্মণদের মতো। তারা শুধু ধর্ম-কর্ম করবে। তারা কেন সেনাবাহিনীতে যাবে?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com