আশরাফুল ইসলাম জয়॥
দূর্গাপূঁজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের ভদ্রঘাটপাল পাড়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে।
দিলীপ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমার দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এখনো পর্যন্ত ২০ টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। এ বছরে প্রায় ৫০ টির মতো প্রতিমা তৈরি করব। প্রতিটি প্রতিমা বিক্রি করে থাকি ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
জেলার কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, পালপাড়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। যেন দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা তৈরির শিল্পীদের। পুরুষদের পাশাপাশি কাজে সহযযোগিতা করছেন বাড়ীর নারী ও শিশুরা। কেউ কেউ খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করছেন, কেউবা নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রতিমা। প্রতিমার কাঠামো তৈরি শেষে এখন চলছে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির মূল কাজ। এরপর প্রতিমা শুকানোর পর কেউ কেউ শুরু করেছেন রঙের কাজ।
ভদ্রঘাট পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগর শ্রীকান্ত পাল বলেন, আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা তা আর হচ্ছে না।
প্রতিমা কারিগররা জানান, চলতি বছর এখানে দুই শতাধিক প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই প্রতিমাগুলো পাবনা, বগুড়া, নাটোর ও টাঙ্গাইলসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাবে।
মন্দিরের পুরোহিত নন্দগোপাল রায় বলেন, ‘সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা, যা আগামী ৮ অক্টোবর পঞ্চমী তিথি ০৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসবে এবার দেবী দুর্গার আগমন দোলায় বা পালকিতে এবং গমন ঘোটক বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে বলা হয়, দোলায় বা পালকিতে দেবী দুর্গার আগমন হলে, তার ফল মহামারী ও দুর্ভোগের সমান। ঘোটক বা ঘোড়ায় দেবীর গমন হলে ছত্রভঙ্গ, ছন্নছাড়া, ধ্বংসাত্মক ফলাফল হয়, যে কারণে অনেকটা হতাশাও কাজ করছে ভক্তদের মনে।
পূঁজা উদযাপন পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু জানান, “এবারে জেলায় ৫০৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। তবে তাড়াশে ১টি, রায়গঞ্জের ১টি, এনায়েতপুরের ১টিকে ঝুকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া সকল পূঁজা মন্ডপে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবেই দুর্গাপূঁজার উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জামায়ত, বিএনপি এবং সাংবাদিক ভাইয়েরা সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। আশা করি আমাদের সিরাজগঞ্জ জেলায় কোন অসুবিধা হবে না। এবাবের দুর্গোৎসব আনন্দমুখর ও নির্বিঘ্নে করতে সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।”
সিরাজগঞ্জ সদর থানা অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। মন্ডপগুলোতে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। দুর্গাপূঁজা শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করতে পুলিশি টহল আরও জোরদার করা হবে।