শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

সিরাজগঞ্জ আদালতে কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির সুষ্ঠ তদন্ত চান সূধীমহল

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১.৪৯ পিএম
  • ১৮০১ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

চলছে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার॥
সিরাজগঞ্জ জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করছেন সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটি ও সূধীমহলসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ।

অপর দিকে সোসাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি মহল। তবে সিনিয়র সহকারী জজ আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করলেও, এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ঠ কেউই। ফলে সৃষ্ঠি হয়েছে ধূম্রজাল। অনেকেই বলছেন-চাকরীপ্রাপ্তরাসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্টরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ইতিমধ্যেই দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। গণমাধ্যমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে গোপনে চলছে নানা তদবির। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিসহ সূধী সমাজের সদস্যরা। তারা অনতিবিলম্বে এ ঘটনার সূষ্ঠ তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু এ বিষয়ে বলেন, “এই ভূয়া ও জালিয়াতির নিয়োগ বাতিল করে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সাবেক আইনমন্ত্রীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি ও স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র পক্ষ থেকে কঠোর অন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতকে দূর্ণীতি ও অনিয়মমুক্ত করা হবে।”

তিনি আরো বলেন, “৩৪ জন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে ২২ জনই ব্রাহ্ম্রণবাড়িয়া ও কুমিল্লার বাসিন্দা, যেখানে সাবেক আইনমন্ত্রীর হাত রয়েছে। ফলে সিরাজগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আগের নিয়োগ বাতিল করে সুষ্ট, ন্যায় ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে নতুন করে ওই সকল পোষ্টে নতুন লোক নিয়োগ দিতে হবে।”

ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ জজ আদালতের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, “নিয়োগ কমিটিতে যে সকল বিচারক মন্ডলী ছিলেন, সূষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে তাদের কে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোন রক্ষক ভক্ষকের কাজ করতে সাহস আর না পায়।”
সিরাজগঞ্জ জজ আদালতের আরেক আইনজীবী রফিক সরকার বলেন, “সাবেক আইনমন্ত্রী যিনি বর্তমানে জেলে আছেন, তিনি অতীতে বহু অপকর্ম করেছেন। এটিও তার অনেকগুলো অপকর্মের অংশ। তার মদদ ছাড়া কোন বিচারক বা নিয়োগ সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি নিয়োগে দূর্ণীতি করার মত এত বড় দূ:সাহস করতে পারে না। সুতরাং আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য যারা আদালত প্রাঙ্গনকে দূর্ণীতিগ্রস্থ ও কলঙ্কিত করেছে, তাদের প্রত্যেককেই শাস্তির আওয়ায় আনতে হবে।”

তবে এতে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা অতিব প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকরা আইনমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় নিজেদের খাসকামরায় বসিয়ে পছন্দের পরীক্ষার্থীদের গোপনে তথাকথিত ‘নিয়োগ পরীক্ষা’ নিয়েছিলেন। সেই ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। কারচুপির মাধ্যমে ৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাত ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। অভিযোগকারীরা হলেন, জাফর ইমাম, মঞ্জুর আলম, আকাশ সাহা, বিপুল রাহা, রিজন আহম্মেদ, শাহিন রেজা ও শিহাব উদ্দিন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই দুই আদালতের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, প্রসেস সার্ভার, অফিস সহায়ক, নাজির, হিসাবরক্ষক, বেঞ্চ সহকারী, ক্যাশিয়ার, লাইব্রেরি সহকারী, অফিস সহায়ক, নৈশপ্রহরীসহ ৩৪ পদে নিয়োগে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। নিয়োগ কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা নাজির (বর্তমানে রংপুরে কর্মরত)। নিয়োগ, বাছাই ও পরীক্ষা গ্রহণ-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ছিলেন সদরের সিনিয়র সহকারী জজ মিনহাজ উদ্দিন ফরাজী এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তানবীর আহম্মেদ। কমিটির সভাপতি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম সালমা খাতুন। তবে কেউই এখন গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলছেন না এ প্রসঙ্গে।

ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগে আরো প্রকাশ, চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লারই ২২ জন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হলেও তা কেবল কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার প্রার্থীদের টেকাতে আইনমন্ত্রীর নির্দেশে বিশেষ ব্যবস্থায় বিচারকদের খাসকামরায় বসিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এই দুর্নীতির নেপথ্যে তৎকালীন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা নাজিরের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।

এদিকে গোপন পরীক্ষার ছবি ফাঁস হওয়ার পর শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নাজির রবিউল হাসান, তাড়াশ সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মুনতাছির মামুন ও কাজীপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাব্বির হোসেনের চাকরি স্থায়ীকরণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই তিন কর্মচারীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তারা সাংবাদিকদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে আগেই ৩১ জনের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা। বর্তমানে ভুক্তভোগীদের দাবির সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেছেন সিরাজগঞ্জ স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটিসহ সূধী সমাজের সদস্যরা। তারা কারচুপির ঐ নিয়োগ বাতিল করে পূণরায় নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম আলী আহমেদ এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন এ প্রতিবেদক।

তবে তাঁর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার পাশা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, সম্প্রতি সিনিয়র সহকারী জজ আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। অপরদিকে সিরাজগঞ্জের তৎকালীন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা নাজির-এর সাথে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com