সিরাজুল ইসলাম শিশির
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসিফ আল-মাহমুদ ও শাহ আলম সেখ বাদী হয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে মামলা দুটি করেন।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দূর্নীতি দমন কমিশন জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর উপসহকারী পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ নভেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয় গত ২০ আগস্ট। অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার ও ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ পায় দুদক।
প্রায় দেড় দশক আগে সাবেক এ সংসদ সদস্যের বার্ষিক আয় ছিল এক লাখ ২২ হাজার এবং ব্যয় ছিল ৮০ হাজার টাকা। তখন তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকার। এখন তার সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৫৬ কোটি আট লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা। হেনরীর সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ২০০৮ সাল থেকে গত প্রায় সাড়ে ১৫ বছরে হেনরীর সম্পদ ৮৮৪ গুণ বেড়েছে। একই সময়ে তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুর সম্পদ বেড়েছে ১৩৬ গুণ।
সিরাজগঞ্জে হেনরী ও তার স্বামীর ১৬টি বাড়ি, দুটি রিসোর্ট, একটি গরুর খামারসহ কয়েক হাজার শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে। হেনরীর রয়েছে অন্তত ৯টি বিলাসবহুল গাড়ি। ঢাকার মিরপুরে ফ্ল্যাট ও জমি আছে। আছে ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেনরী সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
হেনরী বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এর আগে স্কুল শিক্ষিকা থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান হেনরী। তার এ দায়িত্ব পালনকালে আলোচিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ঋণ জালিয়াতির হোতা হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও কয়েকজন ঘুস নিয়েছেন বলে জানান। দুদক তানভীর ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল করলেও পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। হেনরীকেও দায়মুক্তি দেয় দুদক।
বর্তমানে এই দম্পতির বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। গত ১ অক্টোবর মৌলভীবাজার থেকে স্বামীসহ গ্রেফতার হয়ে হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার কারাগারে রয়েছেন।
দুদুকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শহীদুল ইসলাম সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘দ্য ডেইলী স্কাই’ কে বলেন, ‘জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ও ঘুষ, দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে ঢাকা ও পাবনাতে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।’