এফবিডি ডেস্ক॥
রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) টাকা রিজার্ভের বাইরে নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। তিনি বলেছেন, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য রিজার্ভ থেকে ইডিএফ বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। এই টাকা টেক্সটাইল শিল্প থেকেই দেওয়া সম্ভব। সোমবার রাজধানীর পান্থপথের বিটিএমএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় সহ-সভাপতি ফজলুল হক আবদুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ইশতাক আহমেদ সৈকত উপস্থিত ছিলেন।
বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ইডিএফ ফান্ডের কারণে আমরা বিশ^বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে পেরেছি। গ্যাস বিদ্যুৎ ও চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যেও আমরা টিকে থাকতে পেরেছি। ইডিএফ ফান্ড যদি সহায়ক হিসেবে না থাকত তাহলে আমরা এই সংকট মোকাবিলা করতে পারতাম না।
ইডিএফ ফান্ড থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা রফতানির সঙ্গে জড়িত তারাই ইডিএফ ফান্ড ব্যবহার করে থাকে। এটা কোনোভাবেই রফতানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যবহার করার সুযোগ নেই। যারা বলছে ইডিএফ ফান্ডের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে এটা সঠিক নয়।
তিনি বলেন, আগামী দিনে ইডিএফ ফান্ড কোনো কারণে বন্ধ করা হয়ে গেলে বা অন্য নামে চালানো হলে এটার অনেক মিস ইউজ হবে। তখন টাকা পাচারের একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে জন্য এই ফান্ড অব্যাহত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
রিজার্ভের টাকা ইডিএফ ফান্ডে সংরক্ষিত আছে দাবি করে বিটিএমইএর সভাপতি বলেন, ইডিএফ দেওয়ার কারণে রিজার্ভ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে বলছেন কিছু বুদ্ধিজীবীরা। আমরা বলব ইডিএফ থেকে এক টাকাও খরচ হয়নি এটা ৭ বিলিয়ন ডলারই আছে। আমরা ইডিএফ থেকে ডলারের মাধ্যমে বিল মেটাই আবার ডলারেই ফেরত দেই। এই টাকা তো আর খরচ হচ্ছে না। এটা একটা বিনিয়োগ। প্রতিদিন ৫০-৬০ মিলিয়ন ডলার লেনদেন হচ্ছে এই ফান্ডে।
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, করোনাকালে এই ফান্ড না থাকলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারত না। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা তখন ভালো অবস্থানে ছিলাম এই ফান্ড থাকার কারণে। বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বিশ^ব্যাপী যেই মন্দা চলছে সেটার প্রভাব দেশের বাণিজ্যে পড়ছে না ইডিএফ ফান্ডের কারণেই।
বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও কোনো অর্ডার বাতিল হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সারা বিশে^র অর্থনীতি আজ স্থবির। অনেক দেশে অর্ডার বাতিল হচ্ছে তবে আমাদের কোনো অর্ডার বাতিল হয়নি। স্থগিত হয়নি চলছে তবে মন্থর গতিতে। যেই অর্ডার আগে এক মাসে দিত এখন সেটা তিন মাসে দিচ্ছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হলে আমরা আগের গতিতে ফিরে যাব। ইডিএফ ফান্ডকে শিল্পের স্পন্দন অভিহিত করে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, এই তহবিল নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায় সেই বিষয়ে প্রচারণা চালাতে আপনাদের কাছে (সাংবাদিক) অনুরোধ করব। এই ফান্ড যদি কোনোভাবে বন্ধ হয়ে যায় আমি মনে করব শিল্পের হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে এবং একদিন হতে পারে এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে। এই ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে ৪-৫ শতাংশের মতো ব্যবসায়ী পরিশোধ করছে না বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে এই অল্প কিছু মানুষের জন্য ফান্ড বন্ধ না করতে সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি। মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, সব খাতেই টুকিটাকি সমস্যা হয়। তাই বলে অল্প কয়েকজন লোকের জন্য এই ফান্ড বন্ধ করা ঠিক হবে না। বেশিরভাগ মানুষ এই ফান্ডে স্বচ্ছতার সঙ্গে লেনদেন করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক আমদানিকারকদের ডলার সময়মতো না দিয়ে আটকিয়ে রাখছে। এই ডলার তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করব, ব্যাংকগুলোতে নজরদারি বাড়াতে তারা যেন এসব ডলার বিক্রি করতে না পারে। রিজার্ভ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ইডিএফ ফান্ড গঠন করেছে সরকার। আইএমএফ বলছে এই টাকা বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে হলে আইএমএফের এই শর্ত মানতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এই বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিটিএমএর সভাপতি বলেন, আজকে আমাদের আইএমএফ ঋণ দেবে মাত্র সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। আমাদের সেক্টরকে যদি আর একটু সুযোগ দেওয়া হয়। এখান থেকে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারব। এত আয় করলে সেখান থেকেই তো সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার থাকবে। আইএমএফের এই ঋণ তো বড় নয়। টেক্সটাইল শিল্প থেকেই এই টাকা দিতে পারব বলে মনে করি। তাই সরকারকে অনুরোধ করব বাইরের কথায় কান না দিতে এবং যারাই এই গুজব ছড়াচ্ছে রিজার্ভ নেই এটা ঠিক নয়। আমাদের এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। রফতানি আয়ে আমাদের স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলোর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিটেনশন হয়েছে ১৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।