শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

ইভ্যালির রাসেল-শামীমার অর্থ আত্মসাতের মামলার ট্রায়াল শুরু

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯.৩৭ এএম
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥
মোহাম্মদ রাসেলকে বিচারের জন্য আদালতে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, জামিনে থাকা শামীমা আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আরও সময়ের আবেদন করেছেন। তবে আদালত সেই আবেদন নাকচ করে শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

বিতর্কিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী, কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলার ট্রায়াল শুরু করেছে ঢাকার একটি আদালত।

মামলায় আসামিদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী আহসান হাবিব বলেন, “ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।”

সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারির তারিখ ধার্য করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ রাসেলকে বিচারের জন্য আদালতে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, জামিনে থাকা শামীমা আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আরও সময়ের আবেদন করেছেন।

তবে আদালত সেই আবেদন নাকচ করে শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

বাংলাদেশে আমাজন ও আলিবাবার মতো প্লাটফর্ম তৈরির স্বপ্নের কথা বলে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। অধিক গ্রাহক আকর্ষণ করতে অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট দিয়ে অগ্রিম অর্থ নিয়ে পণ্য সরবরাহ করতো ইভ্যালি।

শুরুতেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে তিনি চালু করেন ক্যাশব্যাক অফার। এ অফারের আওতায় পণ্যভেদে ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতেন গ্রাহকরা। পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা জমা হত ইভ্যালির ভার্চুয়াল একাউন্ট ই-ওয়ালেটে। এরপর সেই ভার্চুয়াল টাকার সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে নগদ টাকা দিয়ে পণ্যের অর্ডার করতে পারতেন গ্রাহকরা।

টাকা ক্যাশব্যাকের এমন আকর্ষণীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে প্রচুর পরিমাণে গ্রাহক ইভ্যালি থেকে কেনাকাটা শুরু করেন। এরপর ‘সাইক্লোন’ নামে একটি অফারের মাধ্যমে বিশাল ছাড়ের ঘোষণা দেন রাসেল। সেখানেও পণ্যভেদে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হতো।

এরমধ্যে ইভ্যালিকে জনপ্রিয় করতে রাসেল প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পন্সর, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে স্পন্সর করা এবং তারকা ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রতিষ্ঠানটির পণ্যদূত বানানো শুরু করে।

কোম্পানি ব্র্যান্ডিংয়ের এই ডামাডোলের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারি নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। ৪৫ দিনের মধ্যে এসব পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও, তা কখনো কখনো তিন মাস এমনকি ছয় মাসও ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। অর্থনীতির শাস্ত্রে ‘পঞ্জি স্কিম’ নামে যে প্রতারণার ফাঁদের কথা বলা হয়, সেটিই অনুসরণ শুরু করেন রাসেল। নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে পুরনো গ্রাহক ও মার্চেন্টদের টাকা পরিশোধ শুরু করে ই-কমার্স কোম্পানিটি।

পরবর্তীতে চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির বকেয়ার পরিমাণ ৪০৩.৮০ কোটি টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদ মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল, এত অল্প চলতি সম্পদ দিয়ে কোনোভাবেই এই বকেয়া পরিশোধের সক্ষমতা নেই কোম্পানিটির। এরপরই নড়েচড়ে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সিইও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানান, গ্রাহকদের কাছে ৩১১ কোটি এবং মার্চেন্টদের কাছে ২০৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার কারণে ইভ্যালির কেলেঙ্কারি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন নতুন করে ‘ছলচাতুরির’ আশ্রয় নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

ফেসবুকেও স্ট্যাস্টাস দিয়ে গত ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ রাসেল জানান, বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে।

তবে পরবর্তীতে যমুনা সরাসরি জানিয়ে দেয়, তারা ইভ্যালিতে কোনো বিনিয়োগ করছে না।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির এক গ্রাহক জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির তৎকালীন চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।

মামলা দায়েরের পরদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসা থেকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com