সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন, পলকেই নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৭.০৭ পিএম
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

প্রকাশ্যে সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আধুনিক সংস্করণে চলছে জুয়ার কর্মকাণ্ড।

গ্রাম কিংবা শহরে সমানতালে চলছে জুয়ার কর্মকাণ্ড। ক্রিকেট খেলার সবশেষ ফলাফল বা এক ওভারে কত রান বা কয়টা চার/ছয় হবে- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে টাকার বিনিময়ে ধরা হয় বাজি। পুরো কর্মকাণ্ড চলে অনলাইনে। এটি জুয়ার আধুনিক সংস্করণ।

মফস্বলের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শহরে ক্লাব, অভিজাত এলাকা, এমনকি নিজেদের ঘরের ভেতরেও একা অথবা কয়েকজন মিলে জুয়ার আসর বসছে। এতে প্রতিনিয়ত লোভে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিপিএল, সিপিএল, আইপিএলের মতো জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট খেলাকে নিয়ে ধরা হয় বাজি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি অনলাইন জুয়ার কর্মকাণ্ড বেড়েছে। জুয়া পরিচালনা কিংবা জুয়া খেলা দুটোই করা হয় স্মার্টফোনের মাধ্যমে। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেন করা হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। জুয়ার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বিভিন্ন ধরনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে। ওয়ান এক্স বেট, বেট ৩৬৫, বোভাডা, এক্সবেটসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপে অনলাইন জুয়া খেলা পরিচালিত হয় বেশি। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেখা গেছে জনপ্রিয় আইপিএল খেলোয়াড়দের মুখ লাগিয়ে ভিডিও সম্পাদনা করা সেই ভিডিও প্রচার করে অনলাইন জুয়া খেলায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

দেশে প্রকাশ্য জুয়া আইন-১৮৬৭-এর ধারা ও প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। কিছু দুর্বলতার কারণে বর্তমানে এর প্রয়োগ বেশ কঠিন। ঐ আইনে ক্যাসিনো শব্দটি নেই। অনলাইন জুয়ার প্রতিরোধের জন্য সময়োপযোগী আইন তৈরি করা এখন সময়ের দাবি বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঘরে বসে অনলাইনে আয়ের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে মূলত প্রতারণা করে চক্রের সদস্যরা। এ ধরনের প্রতারণা নতুন না হলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এ ধরনের প্রতারণা করার ক্ষেত্রে প্রতারকরা দেশীয় নম্বরও ব্যবহার করছে। সেক্ষেত্রে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা খুব কঠিন কিছু নয়, তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন?

সম্প্রতি এ ধরনের কল পেয়েছেন- এমন একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রথম কলটি আসে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে। অনলাইনে ঘরে বসে দিনে ২ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ। দুয়েকবার কল কেটে দেওয়ার পরও কল আসে, ইংরেজিতে কথা বলতে চায়, নানা অফার দিয়ে কখনো কখনো বিকাশ নম্বরও চায়।

পাবনার এক ভুক্তভোগী জানান, একের পর এক কল আসতে শুরু করে। প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসছে এবং ইংরেজিতে ঘরে বসে ‘পার্টটাইম চাকরি’র লোভনীয় অফার দিচ্ছে। পরে বিরক্ত হয়ে কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করার পর তাতে বিনিয়োগ করতে বলা হয়।

তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রলোভন দিতে থাকবে। সাধারণত প্রথমে অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত সুদসহ অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। আমাদের দেশে এটা বেশি দিনের না। কিন্তু এত ওপেন, এত ঘনঘন এসব হওয়ার পরেও চুপ থাকার কারণে সামনে বড় বিপদ দেখতে পাচ্ছি।

অনলাইনে জুয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন চান পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪–এর পঞ্চম দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে তিন মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সভায় পুলিশ সুপার পদমর্যাদা থেকে ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। একটি বন্ধ করলে সঙ্গে সঙ্গে আরো ১০টি জুয়ার সাইট খুলে যায়। কিছু গণমাধ্যম জুয়ার বিজ্ঞাপনও প্রচার করে। অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে গণমাধ্যম, পুলিশ, মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটর সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে এ ধরনের সাইবার অপরাধ বন্ধ করা সহজ হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান মনে করেন, যারা শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার প্রলোভনে পড়ছেন তাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে অভিযোগ আসে তার সব কয়টির মামলা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভের লোভে পড়া যাবে না। এ ধরনের মামলা, অভিযোগগুলো একত্রিত করতে শিগগিরই সাইবার সাপোর্ট ইউনিট খোলা হবে।

এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, শিগগিরই অনলাইনে জুয়ার অ্যাপস শতভাগ বন্ধ করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ প্রোপাগান্ডা ছড়ানো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যেকোনো মূল্যে তা বন্ধ করতে কঠোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com