নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহব্যাপী অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিনএনসিসি)। উত্তর সিটির ১০টি অঞ্চলে ১০টি টিম অভিযান পরিচালনা করবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে এসব অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তরায় ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণখানের মধ্য আজমপুর এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের সময় মেয়র আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগামীকাল রোববার থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলে ১০টি টিম এই অভিযান পরিচালনা করবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। এডিসের লার্ভা পেলেই নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।’
বাসা, বাড়ি ও অফিসে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নিয়মিত মামলা হবে। কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনার বাড়ি বা স্থাপনার ভেতরে, বাইরে, আশপাশে কোথাও পানি জমে থাকলে এক্ষুনি ফেলে দিন। ডেঙ্গু থেকে আপনি সুরক্ষিত থাকুন, আপনার পরিবার ও প্রতিবেশীকেও সুরক্ষিত রাখুন। বাড়িতে লার্ভার চাষ করে শাস্তি না পেয়ে বরং লার্ভার উৎস ধ্বংস করে পুরস্কৃত হোন।’
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণা করা হয়েছিল, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই আমরা বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করাসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছি। তবে অতীতের সঙ্গে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেকটা কম। আমাদের কার্যকর
পদক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায়ও আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। ডেঙ্গু পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের লক্ষ্য।’
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণখানের মধ্য আজমপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম এলাকাটি পরিদর্শন করেন। দেখা গেছে, এই এলাকায় অনেক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে আছে। একটিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
এ সময় নির্মাণাধীন ভবনটিতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলকার নাঈন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু সিটি করপোরেশনের পক্ষে পুরোপুরিভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের আন্তরিক সহযোগিতায় গত ঈদে মাত্র ১২ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণের সহযোগিতা পেলে আমরা ডেঙ্গুও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
আজমপুর এলাকায় প্রচারাভিযান শেষে ডিএনসিসির মেয়র নিকুঞ্জ-১ এলাকায় প্রচারাভিযানে অংশ নেন। প্রচারাভিযানে মেয়র আতিকুল ইসলাম আজমপুর ও নিকুঞ্জ এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের মাঝে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং নিজে মাইকিং করে সচেতন করেন। নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযানকালে দুটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। বাড়ি দুটির মালিক বিদেশে অবস্থান করায় খিলক্ষেত থানায় দুটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রচারাভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসহাক মিয়া, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডি এম শামিম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী ও জাকিয়া সুলতানা এবং নিকুঞ্জ-১ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ।