এফবিডি ডেস্ক॥
ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধান করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ, দুদক ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অনুসন্ধান করে আগামী চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তালিকাও চেয়েছেন আদালত।
আজ রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকাসহ অনিয়ম করে ঋণ নেওয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে।
আদালত বলেছেন, ‘আমরা কোনো পক্ষ না, আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এটা যাচাইয়ের জন্য আদেশ দিচ্ছি। আমরা যেভাবে শপথ নিয়েছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি কোনো বিষয় থাকে সেটা আমরা দেখব।’
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক বলেন, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পত্রিকায় যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, এ বিষয়ে কোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংবাদের সত্যতা যাচাই করার আগামী ৫ এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। ঋণ নেওয়ার বিষয়ে এস আলম গ্রুপকেও জানাতে বলা হয়েছে।
এর আগে তিন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশতি প্রতিবেদন নজরে এনেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পরে হাইকোর্ট তাকে রিট করতে বলেন। তবে শিশির মনির রিট না করে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে চিঠি দেন।
গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বরাবর এই চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীসহ পাঁচ গ্রাহক। তারা হলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, আবদুল্লাহ সাদিক এবং গ্রাহক শাইখুল ইসলাম ইমরান ও যায়েদ বিন আমজাদ। তারা সবাই ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যম লেনদেন করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, নভেম্বর মাসের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আর ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ একাই ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। তাই এসব ঋণের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান, নামসর্বস্ব কোম্পানিকে ঋণ প্রদানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে এসেছে। ব্যাংকের কর্মচারীসহ প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী ও সুধীজনের ভাষ্যমতে, রিপোর্টে উল্লিখিত সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত অসাধু লেনদেনের পরিমাণ আরও অনেক গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে। আর এই ধরনের অসাধু লেনদেন আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অধিকতর অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।