রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

হত্যাকারী আর কেউ নয়, ভাগিনা: পুলিশ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪, ৭.২৪ পিএম
  • ২১ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

তাড়াশ সংবাদদাতা॥

৩৫ লাখ টাকা ঋণের দায় থেকে মুক্ত হতে একাই মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারকে সপরিবারে হত্যা করেন রাজীব কুমার ভৌমিক নামে এক যুবক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছেন তিনি।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের সবাইকে (বাবা-মা ও মেয়ে) গলা কেটে হত্যার রহস্য ১২ ঘণ্টার মধ্যেই উদঘাটন করেছে পুলিশ।

হত্যার ঘটনায় জড়িত এক মাত্র আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাঁসুয়া ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে।

রাজীব কুমার ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে তাড়াশের গোপালজিউ মন্দিরের পাশের একটি ফ্ল্যাট থেকে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৫) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির (১৫) গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত স্বর্ণা রানী সরকারের ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, ঘটনার পরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. সামিউল আলমের নেতৃত্বে সহকারী পুলিশ সুপার, (উল্লাপাড়া সার্কেল) অমৃত কুমার সূত্রধর, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ মো. জুলহাজ উদ্দীনের সমন্বয়ে গঠিত ২০ সদস্যের একটি দল তদন্ত শুরু করে। তদন্তের শুরুতে আমরা হত্যার অ্যাংগেলগুলো কি হতে পারে, তা স্থির করি। ভিকটিম বিকাশ ও তার ভাগিনার (ভাগনে) মধ্যে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও পাই। এখান থেকেই আমরা ক্লু পেয়ে যাই। দুপুরের দিকে নিশ্চিত হই যে এ হত্যাকাণ্ডে ভাগিনা রাজীব জড়িত। এরপর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘটনার দায় স্বীকার করেন তিনি। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর পরই একে একে তিনজনকে হত্যা করেন তিনি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন রাজীব। রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন বিকাশ। ব্যবসা করে রাজীব তার মামাকে ধাপে ধাপে লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু রাজীবের কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ। তিনি গত ২২ জানুয়ারি ওই টাকা সাতদিনের মধ্যে ফেরত দিতে রাজীবকে চাপ দেন এবং তার বোন অর্থাৎ রাজীবের মা প্রমীলা রানীকে ফোনে বকাবকি করেন। রাজীব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে কষ্ট পাওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

খুনের বর্ণনায় রাজীব জানিয়েছেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন ২৭ জানুয়ারি সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি লোহার রড ও একটি হাঁসুয়া সংগ্রহ করেন। বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বাসায় আসতে চান। বিকাশ সরকার তাড়াশের বাইরে কাটাগারি বাজার এলাকায় ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন। তিনি টাকা নিয়ে বাসায় এসে থাকতে বলেন। রাজীব যথারীতি বাসায় আসেন। মামি স্বর্ণা রানী তখন রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য তিনতলার বাসা থেকে নিচের দোকানে কফি আনতে যান। সেই সুযোগে রাজীব মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষির কক্ষে গিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তুষি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে তার স্বর্ণা কফি কিনে বাসায় ঢুকলে তাকেও পেছন থেকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন রাজীব। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করার পর গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর মামি ও মামাতো বোন গোঙাতে থাকলে তাদেরও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। তিনজনের মৃত্যুর পর তাদের মরদেহ টেনে বেডরুমে রেখে প্রধান দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যান রাজীব।

পুলিশ সুপার বলেন, রাজীবের দেওয়া তথ্য মতে, তাড়াশে উৎপল কর্মকারের পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড ও তার বাড়ি থেকে হাঁসুয়া জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রে পাওয়া রক্তের নমুনা সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com