সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ক্রসবার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার গাড়ি পারাপার: টোল আদায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত, আহত তিন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত দুই ফুট বাঁধই ভরসা, আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত কাটে খুলনা উপকূলবাসীর খুলনা অঞ্চলের ভরত ভায়না দেউল হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র খুলনায় সড়ক বিভাগের বাধায় বন্ধ কেসিসির ৭ মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সাবেক এমপি আজিজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা লোপাট: এনবিআর ও কক্সবাজারের ডিসিকে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২, ৯.০৮ এএম

এফবিডি ডেস্ক॥

কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট এবং হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা মিলেমিশে লোপাট করার অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। রুল বিষয়ে দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২১ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে সোমবার রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা ও অ্যাডভোকেট মো. শামসুদ্দোহা। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে ‘ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা মিলেমিশে লোপাট’ শিরোনামে কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের দুর্নীতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ১৭ নভেম্বর হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। ওইদিন আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদককে প্রতিবেদনের সত্যতা অনুসন্ধান করতে বলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সেদিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম এ আজিজ খান।

আমিন উদ্দিন মানিক জানান, হাইকোর্ট রাষ্ট্র ও দুদককে খবর নিতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আগামী ২০ নভেম্বর সংশ্লিষ্টদের আদালতে অগ্রগতি জানাতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এ রিট আবেদনটি করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারিসহ নির্দেশনা দেন আদালত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট এবং হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকের থেকে আদায় করা ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা মিলেমিশে লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো মাসিক চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে নামমাত্র ভ্যাট প্রদান করে যাচ্ছে।

গত ১৬ নভেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। পরদিন ১৭ নভেম্বর সেটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কক্সবাজারে অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট ভ্যাট পরিশোধ করছে না। বেশিরভাগ হোটেলে অতিথিদের এন্ট্রি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করে না। রুম ভাড়ার তালিকা রাখে না। এছাড়া রেস্টুরেন্টগুলো ভ্যাট ফরমও ব্যবহার করে না। তারা ভ্যাট কর্মকর্তাদের মাসিক রেটে নির্দিষ্ট ভ্যাট পরিশোধ করে থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কর্মকর্তা হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে মাসিক অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। ভ্যাট ফাঁকি দিতে রাজস্ব কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিক্রির একাধিক রেজিস্ট্রার রাখা হয়। একটি ভ্যাট অফিসের জন্য, অন্যটি মালিকপক্ষের জন্য। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।

এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পিলে চমকানো তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক হোটেল মালিক ও সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন যে ভ্যাটের চেয়ে তাদের দ্বিগুণ ঘুষ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের। এর বিনিময়ে দুই থেকে তিনগুণ ভ্যাটের দায়মুক্তি পাচ্ছেন তারা। এবং ভ্যাট আদায়ের চেয়ে ঘুষ আদায়ে তৎপর থাকার অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

কক্সাজারের পর্যটন শহরের তৃতীয় সারির একটি হোটেল আগস্টে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি ভ্যাট প্রদান করেছে। তার বিপরীতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়েছে দেড় লাখ টাকার বেশি। এরপরও হোটেলটির ২ লাখ টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে। হোটেলটির হিসাব রক্ষকের তথ্যমতে, প্রতিবছর ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট দেন তারা। তবে এর বিপরীতে ঘুস দিতে হয় ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপরও তাদের সাশ্রয় হয় দ্বিগুণ টাকা। অর্থাৎ ৩০ লাখ টাকারও বেশি হোটেলটি ভ্যাটের টাকা লোপাটের সুযোগ পাচ্ছে। হোটেল ম্যানেজারের দাবি, শুধু এই একটি হোটেল নয়। কক্সবাজার পর্যটন শহরের ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ছাড়াও রেস্টুরেন্ট, স্বর্ণের দোকান ও বিপণিবিতানগুলোতেও একই পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করে আসছে।

অভিযোগ আছে, শালিক রেস্টুরেন্টে প্রতিমাসে বিক্রি হয় দুই কোটি টাকা। সরকারের নির্ধারিত ১০ শতাংশ ভ্যাট দিলে দিতে হবে সাড়ে ২০ লাখ টাকা। অথচ কাস্টমস কর্মকর্তাদের মোটা অংকের ঘুসের বিনিময়ে মাসে মাত্র ১ থেকে দেড় লাখ টাকা ভ্যাট দেন তারা। আল গণি হোটেলের থানার সামনে এবং থানা রাস্তার মাথায় দুটি শাখায় প্রতিমাসে বিক্রি হয় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তারা সাড়ে ২৬ লাখ টাকা ভ্যাটের পরিবর্তে দেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।

প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে সোমবার (২১ নভেম্বর) সকালে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা ও অ্যাডভোকেট মো. শামসুদ্দোহা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com