এফবিডি ডেস্ক॥
‘চারটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন। এবং দুটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের জন্য এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।… যারা ঢাকায় আসবেন, কমলাপুর রেল স্টেশনে নেমে উত্তরা পর্যন্ত যেতে হলে কিন্তু আর যানজটে পড়তে হবে না। এভাবে যানজট নিরসন হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবগুলো লাইন চালু হলে দিনে প্রায় ৫০ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে।’
ঢাকায় মেট্রোরেলের প্রথমটির চাকা চলতে শুরু করার পর প্রধানমন্ত্রী জানালেন, সব মিলিয়ে চারটি রুটের কাজ চলছে, সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে দুটি রুটের। এই রুটগুলো চালু হয়ে গেছে ঢাকায় যানজটের সমস্যা আর থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ীতে বুধবার সকালে দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬-এর একাংশের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইনের পরিকল্পনা আছে সরকারের, যার মধ্যে প্রথমটির রুট উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। তবে পুরো পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে ২০২৫ সালে। প্রথম পর্বে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত, আগামী বছরের ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত রুট চালুর ঘোষণা আছে।
ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড গঠনের মধ্য দিয়ে ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণের কথা আবারও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চারটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন। এবং দুটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের জন্য এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।’
এই প্রকল্প অর্থনীতিতে কীভাবে এগিয়ে নেবে, সেটিও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ‘দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়বে, যোগ্যতা বাড়বে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। আর আমাদের জিডিপিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে।
‘যারা ঢাকায় আসবেন, কমলাপুর রেল স্টেশনে নেমে উত্তরা পর্যন্ত যেতে হলে কিন্তু আর যানজটে পড়তে হবে না। এভাবে যানজট নিরসন হবে।’
২০৩০ সালের মধ্যে সবগুলো লাইন চালু হলে দিনে প্রায় ৫০ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা ছাড়াও অন্য বড় শহরেও একই ধরনের প্রকল্পের ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, আমাদের দেশবাসী তারাও (মেট্রোরেলের সেবা গ্রহণের) সুযোগ পাবেন।’
মেট্রোরেল পরিবেশবান্ধব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ইলেক্ট্রিক ট্রেন। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। পাতাল মেট্রোরেলের টানেল সংলগ্ন মাটির শব্দ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণ মাত্রার মানদণ্ড সীমার অনেক নিচে থাকবে।’
চার মাইলফলক:
মেট্রোরেল চালু হওয়াকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় নতুন পালক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, বাংলাদেশ আরও চারটি মাইলফলক স্পর্শ করল।
তিনি বলেন, ‘১. মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক।
‘২. এই প্রথম বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল।
‘৩. মেট্রোরেল দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা পরিচালিত করা হবে। তার ফলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি, এটি তারই একটি অংশ হিসেবেই কাজ করবে। তার নুতুন মাত্রা সংযোজিত হলো।
‘৪. বাংলাদেশ দ্রুত গতির ট্রেনের যুদে পদার্পণ করল। এই মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ গতি হবে (প্রতি ঘণ্টায়) ১১০ কিলোমিটার।’
নৌকায় ভোট দেয়ার সুফল:
দেশের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশ সেবার সুযোগ দেয়ায় এগুলো করা গেছে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের যে উন্নতি হয়, সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসম সাহসে আমরা অসীম/ সম্ভাবনার পথে/ ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায়/ পিছে চাব কোন মতে!’
তিনি বলেন, ‘এগিয়ে যাবে বাঙালির দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সব বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আমরা বাংলাদেশকে আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুটে সংযোজিত করলাম। এটা হচ্ছে এমআরটি-৬।’
জনশক্তির প্রশিক্ষণে কমবে বিদেশ নির্ভরতা:
প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গঠন করে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনার জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমানো হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাই স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তুলব, এই মেট্রোরেল পরিচালনার ক্ষেত্রে।’
মেট্রোরেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এর মান নিশ্চিত রাখা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা—এর সবকিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবেন, তাদের দায়িত্ব।’
দেশের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে সহজে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,
‘বয়স্ক যাত্রীগণ, তাদের সুবিধার জন্য সংরিক্ষত আসন থাকবে। প্রতিটি মেট্রো ট্রেনে একটি স্বতন্ত্র নারী কোচ থাকবে, সেখানে নারীরা চড়তে পারবে, যেতে পারবে। নারী যাত্রীদের জন্য পৃথক ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকবে। তার সঙ্গে শিশুদের পরিচর্যার স্থান থাকবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেন বিনা খরচে ভ্রমণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছেও বলেও জানান তিনি।
এমআরটি-৬ লাইনের নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটা নির্মাণের সময় খুব কষ্ট হয়েছে। অনেক রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কিন্তু সেই দিন শেষ। আপনাদের যে সহযোগিতা আমরা পেয়েছি তার জন্য আমি এই এলাকাবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদের সবরকম সহযোগিতা না পেলে এত দ্রুত এটা করতে পারতাম না।’