টিডিএস ডেস্ক॥
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “দুঃসময়ের কণ্ঠস্বরঃ তাঁদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা” শীর্ষক আলোচনাটি ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, সকাল ৯:৩০ টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচকদের মধ্যে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা)-এর সভাপতি মুনিরা খান; এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ; সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ; ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্কের সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি; গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ মুক্তাদির রশীদ; জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য প্রীতম দাস; জোবান-এর সম্পাদক রেজাউল করিম রনি; বরখাস্তকৃত সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিম; রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষক ড. জাহেদ উর রহমান; সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল; ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সংগঠক মাইকেল চাকমা; আইপিনিউজ বিডি-এর বিশেষ প্রতিবেদক উ মিমি মারমা মিমি; বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি-এর নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার; এএফপি বাংলাদেশ-এর ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদরউদ্দিন শিশির; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা; বৈষম্যে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াঁজো কমিটির সমন্বয়ক মামুন আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি আমার দুঃস্বপ্নের কথা কখনো বলিনি, এর পেছনে কারণ হলো, আমি সঠিক বিচার পাবো না। আমার চেয়েও কষ্টের মধ্যে অনেকে গেছেন। আমি আমার স্বজনকে ফিরে পেয়েছি, কিন্তু অনেকে তাও পায়নি। একটা ফ্যাসিস্ট সরকার একা কাজ করে না, সংবাদ মাধ্যম, প্রশাসন সঙ্গে নিয়ে কাজ করে। আমাদের সবার স্বপ্ন ভিন্ন নয়। সংস্কার করা সম্ভব। জনস্বার্থেই সংস্কার করা প্রয়োজন। আমার মতে, সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হচ্ছে বিচার পাওয়া। আমরা এমন একটা সমাজ চাই যেখানে সময় মতো বিচার হবে। আমরা সমালোচনা করি তবে ফোকাস যেন নষ্ট না হয়। আমরা যেন সব কথা বলি, শুনি, বিবেচনা করি। স্বপ্নকে ধারণ করেই সংস্কার আসবে। ক্ষমতার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করি। ফ্যাসিজমের দোসররা সব জায়গায় আছে, বিভ্রান্ত না হয়ে আমরা সবাই মিলে কাজ করতে চাই।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। সকল স্তরের, সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে। এই আন্দোলনের ফসল যেন আমাদের ঘরে ঢুকে এই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে, নাহলে প্রত্যাশা অপূর্ণ রয়ে যাবে। থেমে থাকা যাবে না। আমাদের সামনে অপূর্ব সুযোগ পরিবর্তন আনার। যদি বিভক্তির রাজনীতি করি অন্তর্ভুক্তির বদলে, টেনে নামানোর রাজনীতি থেকে বের না হই তবে সকল সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষমতার ব্যবহার, অপব্যবহার উভয়ের পার্থক্য বুঝতে হবে। নৈতিকতাবোধের অভাব আমাদের যেই ক্ষমতাই থাকুক অপব্যবহার করতে বাধ্য থাকবে।
মুনিরা খান বলেন, বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবার মত সরকার আমরা কখনোই পাইনি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এমন সময়ে দেশের দায়িত্ব নিয়েছে যখন প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংক সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। উপদেষ্টাদের প্রয়োজন নিয়মিত রোডম্যাপ নির্ধারণ করা উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। আপনারা কেউ অধৈর্য হবেন না, সরকারকে সময় দিন একটি স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করার। স্বচ্ছ উপায়ে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ বলেন, নাগরিক সমাজ নিয়ে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল আমাদের জন্য। তিনি সমাজে চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত যারা সোচ্চার ছিলেন তাঁদের ধন্যবাদ জানান। রাজনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির ভয়ে অনেকে চেষ্টা করেন না, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, মানুষ ভালো হতে হবে, ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আসতে হবে, তবেই সিস্টেমকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হবে। সামাজিক অবক্ষয় যখন হয়, সব জায়গাতেই হয়। এই সরকারকে সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করি। সরকার নামানো, সরকার চালানো এক নয়। এই আন্দোলনকে শুধুমাত্র বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে মনে করেছে এই সরকার। আমরা সকল স্তরের জনগণ এক সুতোয় গাঁথা ছিলাম। সাধারণ মানুষের সাথে সরকারের যোগাযোগ নেই। পলিথিন সরাতে এই সরকার আসেনি। রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করতে হবে এই সরকারের। বাংলাদেশের সবাইই সরকারের অংশীজন হতে চায়, এই বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের সব কয়টি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলেছেন। অনেকেই নির্যাতনের, নিষ্পেষণের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো সবসময় এক পক্ষকে তাল দিয়েছে। শুধু একটু সাহস দেখাবার প্রয়োজন ছিল, সত্য বলবার জন্য। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আরও বেশি পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। সত্য কথা বলতে চাই আমরা। অপতথ্য, গুজবের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসবাস করেছি আমরা, সেখান থেকে বের হওয়া প্রয়োজন।
খাদিজাতুল কুবরা অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আগে সাহস পাইনি বলার যে আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। ১৫ মাস ফেরত চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এই কথা বলারও আমার সাহস ছিল না। মামলা করার ২ বছর পর আমাকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার থেকে বের হওয়ার আশা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
মেজর রেজাউল করিম অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এমন একটা মামলায় আমাকে জড়ানো হয় যার সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় আমরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আদেশের অপেক্ষা না করে এগিয়ে যাই যেটা আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আট দিন গুম করে রাখার পর পাঁচ বছর জেলে আটক করে রাখা হয়। আমাকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করা হয় যে তারেক জিয়া আমাকে ছয় কোটি টাকা দিয়েছে আইএসএ-র হয়ে বোমা হামলা করার জন্য।
উমিমি মারমা মিমি বলেন, ৫ তারিখের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু আদিবাসীরা আদৌ স্বাধীন হয়েছে কি না? সবার কাছে প্রশ্ন রাখলাম, আমরা আদিবাসীরা কবে স্বাধীনতার স্বাদ পাবো? খাগড়াছড়িতে এখন যা হচ্ছে সেটা কারো কাম্য নয়। আদিবাসী নারীদের উপর নির্যাতনের কথা সংবাদমাধ্যমে তেমন আসে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
প্রীতম দাস বলেন, ফেসবুকে সাদত হাসান মানটোর উক্তি শেয়ার দেয়ার কারণে ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ একে ধর্মীয় অবমাননা বলে তৌহিদি জনতার নামে আমার বাড়িতে আক্রমণ করে। পাঁচ মাস কারাভোগের সময় আমার পরিবার, বন্ধু বান্ধবদের ভয় ভীতি দেখানো হয়েছে। ভয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত থাকতে হয়েছে আমাদের।
রেজাউল করিম রনি বলেন, পাহাড়ে সমতলে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফ্যাসিবাদের সামাজিকীকরণ করা হয়েছে। তা ব্যক্তি আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আমার মতে স্বাধীনতা মানে দেশ পরিচালনা, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণের স্বাধীনতা। রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি আমরা এতদিন। আমাদের গণমাধ্যম গণমাধ্যম নয়, প্রচারমাধ্যম। আমাদের গণমাধ্যম কারো চরিত্র গঠন করে, কারো চরিত্র হরণ করে। গণমাধ্যম প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন নয়।
মামুন আবদুল্লাহ বলেন, আমি শিক্ষাজীবনে হলে থাকতে পারি নাই। এফ রহমান হলে, আমার এক বন্ধুকে সারা রাত নির্যাতন করে সকালে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল এই অন্যায়ের শিকড় তুলে ফেলার প্রথম ধাপ। বিগত বছরগুলোতে এদেশে চলেছে বিভাজনের রাজনীতি, তা থেকে বের হতে হবে। এই গণঅভ্যুত্থানের নিয়ন্ত্রণ এখন আমাদের হাতে নেই।
নুরুল হক নুর বলেন, আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল আমি যেখানেই যাবো সেখানেই হামলা করা হবে। আয়নাঘর থাকবে না বলা হলেও, পরবর্তীতে যে সরকার আসবে তখন যে থাকবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? ক্ষমতার ভারসাম্য, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন আমাদের আগে থেকেই ছিল। সংসদীয় ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। বিগত সরকারের সময়ে দেশে আইনের কোন প্রয়োগ ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোন আলোচনা হচ্ছে না, যার দরুন বিভিন্ন জায়গায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে পার্শ্ববর্তী দেশ। পাহাড়কে অশান্ত করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পনার মাধ্যমে, এগুল নিয়ে কাজ করতে হবে।
মুক্তাদির রশীদ বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা কখনোই ছিল না। আমাদের সমাজকে বিভক্ত করা হয়েছে। মব জাস্টিস হচ্ছে, এ থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে ভাবতে হবে। বিগত সরকার মিথস্ক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। জবানহীন মানুষ হয়ে ওঠা যে কত বেদনার, তা বলে বুঝানো যাবে না। পুলিশ যখন সাঁওতালদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল, কেউ কথা বলেনি। পুলিশকে তখন প্রশ্ন করেনি সংবাদমাধ্যমগুলো। সংবাদমাধ্যম যদি কেবল মাত্র সরকারের পূজারি না হয়ে, সত্যিকার সংবাদ পরিবেশন করতো তবে এই সংকট তৈরি হতো না। সমস্যার সাথে সাথে সমাধান নিয়েও কথা বলতে হবে। যে দেশে আইনের শাসন নেই, সেই দেশে পিটিয়ে মারার সংস্কৃতি তৈরি হয়।
উমামা ফাতেমা বলেন, ধাপে ধাপে সংগ্রাম হয়েছে এই আন্দোলনে। এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। নারীদের এই সাহসিকতা, আন্দোলনের সম্মুখে তাঁদের অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে তেমণ আসেনি। আন্দোলনকে গণমাধ্যম একটা বৃত্তের মধ্যে নিয়ে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে রাজনৈতিক দল বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে গেছে। উপদেষ্টাদের আরও কঠোর হয়ে সকল সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। রাষ্ট্র সংস্কারে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা যেন সামনে আসে সেই আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মাইকেল চাকমা পাঁচ বছর গুম থাকার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মৃত্যু যেমন কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করে না, আমিও কাউকে কিছু জানাতে পারিনি। আমার জীবন ছিল দেয়ালের ভিতর। জীবন নিয়ে যে ফেরত এসেছি এজন্য আমি ধন্য মনে করি। আদিবাসীদের অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলা কি অপরাধ কি না? বার বার জিজ্ঞেস করেছি আমি। সামরিক শাসন পাহাড় থেকে সরানো হলে তা অন্য দেশের হয়ে যাবে। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় পাহাড়কে এমন কথা বলা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, সামরিকভাবে সমাধান করা যাবে না। দেশে শান্তি ফিরে আসবে, এই আশা ব্যক্ত করেন।
কল্পনা আক্তার বলেন, শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার কারণে আমার ও আমার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা করা হয়েছিল। কারাগারে পাঠানোর আগে আমাকে ডিবি অফিসে সাত দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার চেয়েও পাইনি। বিচার চাওয়ায়, মজুরী ২৩ হাজার টাকা করতে বলায়, আমাদের সিআইএ-এর এজেন্ট বলা হয়েছে। শ্রমিকদের দাবী দাওয়া, আমাদের কথা সংবাদ মাধ্যমে আসতে হবে।
কদরউদ্দিন শিশির বলেন, অপতথ্য,গুজব নিয়ে আমি আগে থেকেই কাজ করতাম। বঙ্গবন্ধুর নাতির গুজব ছড়ানো নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার ও আমার পরিবারের উপর অত্যাচার নেমে আসে। সাংবাদিকদের যদি সদিচ্ছা থাকে, তারা সরকারের কাছে বিক্রি না হয় তবেই স্বচ্ছতা আসবে। গণমাধ্যম যেন প্রোপাগান্ডা সেন্টার না হয়, এজন্য আমাদের ভাবার প্রয়োজন।
দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, অসম ত্রাণবণ্টন নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেয়ার পর, আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গুম করে রাখা হয়। নতুন সরকার আসলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ৫৪ ধারা কেন বাতিল হয় নাই? আমরা যদি সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে না আনতে পারি, তাহলে সংস্কার আসবে না। পাহাড়-সমতলে সমান অধিকার আনার স্বপ্ন দেখি আমি।
ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, অনেকের লড়াইয়ের গল্প আমরা জানি। সরকার ভয় তৈরির জন্য নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে কিছু মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। হুমকি দিয়েছে বহুবার কথা বলার জন্য। ভয় ছিল কথা বলার জন্য, কিছু মানুষ সেই ভয়কে বড় করে দেখিয়েছে। আমরা অনেকেই ভয়কে আরও বড় করে তুলেছি।
মাসুদ কামাল বলেন, ভয় পেলে কি ভয় আমাকে ছাড়বে? আমার স্বপ্ন ছিল, আমি কি চাই? আমি পরিবেশ চাই কথা বলার জন্য। সরকার সবার চাহিদা আদৌ পূরণ করতে পারবে কি না, জানি না। স্বৈরাচারি আমলা দিয়ে বিপ্লবী সরকার চলতে পারে না। সমালোচনা নেয়া এবং সমাধান করার মত মানসিকতা সবার থাকতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা এর আগেও ন্যাক্কারজনক বিবৃতি দেখেছি। ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক জায়গা দরকার তবে রাজনৈতিক বিষয়কে অস্বীকার করে নয়। ফ্যাসিস্টরা দেশে বিদেশে এখনো কাজ করছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে। ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান ঠেকানো, সিস্টেম বদল করা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তৈরি করতে জাতীয় ঐক্যমত প্রয়োজন।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যবহার করার শর্ত তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।