সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

সাভারে গ্যাসের জন্য হাহাকার

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৪, ৪.৫৬ পিএম
  • ২২ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

গ্যাস নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছেই না সাভারের আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের। সারা বছর গ্যাস সংকট থাকলেও গত দুই সপ্তাহে তা তীব্র হয়েছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প কারখানার উৎপাদন ও ব্যক্তি জীবনে। শুধু তাই নয়, গ্যাস না পেয়ে পরিবহন সেক্টরেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকেরা পোহাচ্ছেন দারুণ ভোগান্তি। আবাসিক গ্রাহকদের যেমন রান্নার জন্য খুঁজতে হচ্ছে ভিন্ন পন্থা, তেমনি চড়া দামে বিকল্প জ্বালানি কিনে উৎপাদন ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার মালিকরা। এর বাইরে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও মিলছে না জ্বালানি গ্যাস।

গ্যাস সংকটের কারণে এ অঞ্চলের অনেক এলাকার মানুষকে রান্না না করে বিভিন্ন হোটেল থেকে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ রান্নার জন্য বিকল্প হিসেবে রাইসকুকার, ইন্ডাকশন ও স্টোভ ব্যবহার করছেন।

আশুলিয়ার কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা বলেন, দিনের বেলায় মিলছে না রান্নার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস। রাতের দিকে কিছুটা আসলেও তার স্থায়িত্ব থাকে অল্প সময়। এতে করে পুরো রান্নার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভার সোবাহানবাগ এলাকার বাসিন্দা আসমা আক্তার বলেন, সারাদিনই বাসায় গ্যাস থাকে না। তাই সকালের নাশতা বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। আর সন্ধ্যার পর লাইনে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায় তখন বাধ্য হয়ে রাত জেগেই সারাদিনের রান্না সেরে রাখি। আর

সারাদিন সেসব রান্না করা ভাত-তরকারি ওভেনে গরম করে কোনোমতে খাই। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, কোনো জবাবদিহিতা নেই। কোনো পরিবর্তন নেই।

এদিকে এই শিল্পাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজারের মতো ছোটবড় শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট) চাপের গ্যাস প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে তা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

কারখানা মালিকরা বলছেন, এ চাপ সংকটের কারণে বিকল্প পদ্ধতিতে চলছে কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম। এতে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক।

এ বিষয়ে সাভারের উলাইল এলাকায় অবস্থিত আল মুসলিম গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আবু রায়হান বলেন, প্রায় মাসখানেক ধরে আমাদের এই গ্যাস সংকট পোহাতে হচ্ছে। এতে করে আমাদের কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হয়। লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প জ্বালানির মাধ্যমে আমদেরকে উৎপাদন চালিয়ে নিতে হচ্ছে। আর এতে করে আমাদের প্রতিমাসে মাসে যেখানে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার ইউটিলিটি খরচ হতো সেটি এখন প্রায় ১০ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। অতিরিক্ত এই তিন কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের লাভের পরিমাণও কমে এসেছে অনেকটাই।

এছাড়াও এসব এলাকার সিএনজি স্টেশনগুলোতেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত গ্যাস। দিনের বেলায় লাইনে গ্যাসের চাপ (প্রেসার) কম থাকায় সারাদিনের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাত ১১টার পর থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভিড় করেন চালকরা।

শাহিনুর রহমান নামে এক প্রাইভেটকার চালক জানান, গতকাল সাভারের শিমুলতলা থেকে গাড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হই। পথিমধ্যে সাভারের রেডিও কলোনি থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত চারটি সিএনজি পাম্পের একটিতেও গ্যাস পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে অকটেন ভরে গন্তব্যে পৌঁছেছি।

এ ব্যাপারে জিরানী সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, সারাদিনই পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছি না আমরা। গ্যাসের মূল লাইনে চাপ স্বাভাবিকভাবে ১৮ থেকে ২০ পিএসআইজি পাই। কিন্তু এখন আমরা সেখানে ৩ থেকে ৫ পিএসআইজি পাচ্ছি। তবে রাতের বেলায় ১২ থেকে ১৩ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. খাদেম উদ্দিন বলেন, শীতের এই সময় গ্যাসের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। চাহিদা অনুপাতে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই এ সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com