এফবিডি ডেস্ক॥
‘২০১৪ সালের এই সফরের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ছিলো জাপান সফর। জাপানি সহযোগিতার যতো প্রকল্প সবই সেই সফরের ফসল। সেখানেও গল্প আছে যা হয়তো কখনও বিস্তারিত বলা হবে না। কিন্তু মেট্রোরেলের ডিজাইন এবং সমীক্ষার কাজ শুরুর পরপরই ঘটে গেলো হোলি আর্টিজানের হৃদয়বিদারক ঘটনা।’
উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম মেট্রোরেল। এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা হচ্ছে এই রেল হলো জটের শহরে যাদুর ট্রেন। এর পেছেন রয়েছে নানা গল্প। হোলি আর্টিজান হামলার মতো হৃদয় বিদারক ঘটনা। যারা এগুলো সামলেছেন, আজ তারা স্মৃতিকাতর। তাদেরই একজন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
উদ্বোধন নিয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি আংশিক তুলে ধরেছেন হোলি আর্টিজান হামলার পর চ্যালেঞ্জ উৎরানোর গল্প।
“একটা বড় প্রকল্পের পেছনে ছোট-বড় মিলিয়ে অনেক অনেক গল্প থাকে। কিছু গল্প তৈরিতে ছোটখাটো অবদান, স্বাক্ষী হবার সৌভাগ্য হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেলের গল্পটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন মন্ত্রী পরিষদ সচিব আংশিক বলেছেন। অনেক রাতে যখন সিদ্ধান্ত হলো যে চায়না সহযোগিতা করবে সেইদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর আবাসস্থলে পৌঁছে যখন ফিরে আসবো তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন ‘ওরা চুক্তিপত্র তৈরিতে কাজ শুরু করেছে, যত রাতই হোক আমাদের এখানে যদি চুক্তি স্বাক্ষরে তারা রাজি হয় তাহলে আমার এখানে নিয়ে এসো।’
আমি বললাম রাত দুইটা বেজে যেতে পারে। উনি আবার বললেন ‘অসুবিধা নেই, আমি জেগে থাকবো’। ওনাকে আশ্বস্ত করে দ্রুত ফিরে আসলাম।
চুক্তিপত্র তৈরি হয়ে গেলো রাত পৌনে দুইটার দিকে। আমরা ৫-৬ জন আবার হাজির হলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আবাসে। তাঁর উপস্থিতিতেই স্বাক্ষর হলো ঐতিহাসিক সেই কাঠামোর চুক্তি।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, এতোবড় কাজ হয়ে গেলো, আপনি আমাদের মিস্টি খাওয়াবেন না?! উনি হেসে দিয়ে বললেন, ‘এই মধ্যরাতে বেজিংয়ে মিস্টি কোথায় পাবা, এক কাজ করো, আমার শোবার ঘরে লিখার টেবিলে দুইটা চকলেটের বক্স আছে, নিয়ে এসো।’
আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবার আগে দিলাম, তারপর চীনের প্রতিনিধিসহ সবাইকে। দুই একটা ছবি কারও মোবাইলে থাকতেও পারে।
২০১৪ সালের এই সফরের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ছিলো জাপান সফর। জাপানি সহযোগিতার যতো প্রকল্প সবই সেই সফরের ফসল। সেখানেও গল্প আছে যা হয়তো কখনও বিস্তারিত বলা হবে না।
কিন্তু মেট্রোরেলের ডিজাইন এবং সমীক্ষার কাজ শুরুর পরপরই ঘটে গেলো হোলি আর্টিজানের হৃদয় বিদারক ঘটনা।
সব কাজ বন্ধ হয়ে গেলো। ৭ টি জাপানিজ পরিবারের সাথে রোজা রেখে রাত এগারোটা থেকে পরদিন প্রায় দুপুর বারোটা পর্যন্ত মৃতদেহ হস্তান্তরের দীর্ঘ কাজটি ছিলো আমার জীবনের কঠিন এবং উল্লেখযোগ্য কাজ। তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেটার বিস্তারিত বলা যাবে না। ৭ জনের মধ্যে প্রায় সকলেই এই প্রকল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।
জাপানের যে কারও সফর স্থগিত হয়ে গেলো। আমরা পথ খুঁজছি কিভাবে তাদের আশ্বস্ত করা যায়, বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায়। সিদ্ধান্ত হলো আমরাই জাপানে যাবো। প্রয়াত শ্রদ্ধেয় অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব এবং আমি যাবো। পরে সিদ্ধান্ত হলো এবং মাঝে কিছুদিন সময় দিয়ে আমরা আলাদা আলাদা গেলাম, অনেক বৈঠক করলাম। তারপর তৃতীয় দেশেও সাক্ষাৎ অব্যাহত থাকলো। তারা কাজ শুরু করলেন আবার জাপানে বসেই, যদিও তা সবার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিলো।
আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলো।
তারপর আসলো কোভিডের ধাক্কা। দুটো বড় আঘাত সহ্য করতে হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পকে। সময় বেড়েছে, খরচও বেড়েছে।
প্রস্তাব করেছিলাম হোলি আর্টিজানের জাপানিজ ভিক্টিমদের নামে স্টেশনগুলোর নামকরণ করতে। সব পরিবারের সম্মতির প্রয়োজন ছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে ফার্মগেট স্টেশনে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের। তারা কেউ শেষ দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু সেই রাতে গভীর শোকে মুহ্যমান কিছু কিছু পরিবার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন আবার আসার। গত সফরেও আমরা তাদের সবার সঙ্গে দেখা করেছি। সামনের সফরেও হয়তো দেখা হবে।’
তাদের সেই অবদানকে এইদিনে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।”