প্রেস বিজ্ঞপ্তী॥
বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি অপ্রিয় চরম সত্যে রূপান্তরিত হয়েছে, যা সমাজ থেকে সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয়। দুর্নীতির কারণে সমাজের প্রশাসনিক এবং সরকারি গোষ্ঠী লাভবান হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা বর্তমানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। উদ্যোক্তাদের নতুন ব্যবসা শুরু থেকে তা পরবর্তীতে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া এবং ঘুষ প্রদান করা একটি স্বাভাবিক প্রথায় পরিণত হয়েছে। শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আঞ্চলিক আলোচনা সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির অভিজ্ঞতা এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)- এর সহায়তায় এই আলোচনা সভাটি ঢাকার সিরডাপ- এ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। সকল উদ্যোক্তাই উল্লেখ করেন যে, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি, প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়নকরণ, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, ভ্যাট প্রদান প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হয় এবং প্রতিটি দপ্তরে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়। দুর্নীতির কারণে অনেক সময় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও এই দেশে বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে তাঁরা মতামত প্রকাশ করেছেন। আলোচনায় উপস্থিত একজন ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি এবং আমলাতন্ত্রের জটিলতার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের লোন প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোও নানা ভাবে হয়রানির শিকার করে বলে তাঁরা মতামত প্রকাশ করেছেন।
একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন যে, নারী হিসেবে তাঁদের অতিরিক্ত হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। যার কারণে, বর্তমানে নতুন নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অনলাইন প্লাটফর্ম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর অন্যতম কারণ হলো এক্ষেত্রে তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স এর দরকার হয়না বা কোন প্রকার দুর্নীতির শিকার হতে হয়না। করোনা মহামারী সংকট নিরসনে সরকার প্রদত্ত প্রনোদনা প্যাকেজের বন্টণ প্রক্রিয়াতেও তাঁরা দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেছেন। অনেক সময় সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এবং সরকারি কর্মকর্তারা অতিরিক্ত অর্থ জরিমানা করে এবং ব্যবসায়ীদের এজন্য সমঝোতার আশ্রয় গ্রহণ করতে হয় যা আসলে দুর্নীতিরই নামান্তর।
পাশাপাশি তাঁরা বলেন যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে দুর্নীতির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কর্মকর্তারা অনেকাংশে দায়ী। সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকার পরিবর্তে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন। অংশগ্রহণকারী একজন উদ্যোক্তা বলেন যে, ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়াকে ডিজিটালকরণ করা হলেও প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনার কারণে এর বাস্তব প্রয়োগ এখনো সম্ভব হয়নি যা বিভিন্নভাবে দুর্নীতি চর্চার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দুর্নীতি প্রতিরোধে অকার্যকরী ভূমিকা উল্লেখ করে তাঁরা বলেন যে, সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় এর অভাব রয়েছে এবং সংগঠনগুলো সরকার সমর্থিত। তারা সরকার বা প্রশাসনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজই করবেন না।
উক্ত আলোচনা সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং সেখানে উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বজনপ্রীতিমুক্ত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সরকারি কঠোর হস্তক্ষেপ দরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে এবং দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও দুর্নীতি প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ হতে হবে এবং অধিক সক্রিয় ভূলিকা পালন করতে হবে।
আলোচনা সভায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে শাহেদুল ইসলাম হেলাল, আবদুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, শোয়েব চৌধুরী, হেলাল উদ্দীন এবং সিজিএজ এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানসহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।