আওয়ামী যুবলীগের মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন-লুটপাট-ভোটচুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, বিএনপির বিরুদ্ধে, আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। তৈরি হয়ে যান, প্রস্তুত হয়ে যান।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই সমাবেশে কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদেশি ঋণ গিলে খাবে, গণতন্ত্র গিলে খাবে। নির্বাচন গিলে খাবে, সুযোগ পেলে বাংলাদেশ গিলে খাবে।’
আইএমএফের ঋণ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেন- আমরা নাকি ঋণ নিয়েছি খাওয়ার জন্য। আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, তারা জানে শেখ হাসিনার সরকার ঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করে দেবে।’
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি গড়ে জাতীয় আয়ের ২৮ শতাংশ ঋণ নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে এবং তাদের সময় রিজার্ভ সাড়ে ৩ বিলিয়নের কম ছিল বলেও উল্লেখ করেন কাদের।
মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লেকের পূর্ব পাশে সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত হন। পরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শুরু হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুবলীগের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি নয়:
সমাবেশে বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিএনপি কয়েকটা জেলায় সমাবেশ করে ভাবছে ধাক্কা দিলেই সরকারের পতন হয়ে যাবে। বন্দুকের নলের মুখে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি নয়, আপনাদের কর্মসূচিতে চলে যাবে। আপনারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘দেশবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’
বিএনপি দল নয়, পাকিস্তানের এজেন্ট:
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়া, মোশতাক, রশিদরা পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণার রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল বাংলাদেশকে। তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছে।’
‘বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, পাকিস্তানের এজেন্ট। তাই এরা ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। বিএনপি ভয় দেখায়, হুমকি দেয়, ১০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাবে এবং তারা ক্ষমতায় চলে যাবে। ওরা পাগল, খুনি।’
আওয়ামী লীগ পালানোর দল নয় উল্লেখ করে ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘তাদের নেতা তারেক জিয়া লন্ডনে পালিয়ে গেছে। তোমরা পালাইয়া পাকিস্তান যাইতে পারো। আমরা পালাতে জানি না।’
ষড়যন্ত্র রুখে দিতে যুবলীগ প্রস্তুত:
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যুবলীগ জিয়াউর রহমানের অপশাসনের বিরুদ্ধে, এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। যুবলীগ নেতা নুর হোসেন গুলির মুখে বুক পেতে দিয়েছিলেন। যুবলীগ খালেদা-তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলার যুবসমাজ আপনার নির্দেশের অপক্ষায় রয়েছে। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে যুবলীগ প্রস্তুত রয়েছে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। মহাসমাবেশে যুবলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংঠনের জাতীয় নেতরাও উপস্থিত হন।
এর আগে মহাসমাবেশ সফল করতে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। গায়ে বাহারি রঙের টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ আর হাতে ফেস্টুন নিয়ে আসেন তারা। সারিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন গেট দিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন।
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জোরদার করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা গেট পার হতে হয় নেতা-কর্মীদের। এ ছাড়া মূল সভামঞ্চের কাছাকাছি যেতেও পাড়ি দিতে হয় নিরাপত্তা গেট। সতর্কাবস্থান নেন র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।