মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

ব্যবসায়ীরা ডলার চায় রিজার্ভ থেকে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮.১৫ এএম
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগামী জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করাসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেছে এফবিসিসিআই প্রতিনিধি দল। দাবি পূরণের আশ্বাস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খুলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
একইসঙ্গে চলমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠকে এমন চার দফা দাবি তুলে ধরেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি।
অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ সব দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্বমন্দার কারণে দেশের বাজারে সংকট শুরুর পর থেকে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেতে এ বছরের শুরু থেকে নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছেন এফবিসিসিআই প্রতিনিধিরা।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুরে এফবিসিসিআই-এর ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র নির্বিঘ্নে খুলতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছি।
‘রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও আরও অনেক পণ্য প্রয়োজন হয়। এজন্য আমদানি সহজ করতে বলেছি। এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে সহায়তা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’

এফবিসিসিআই-এর এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সার্বিক প্রভাবে রপ্তানির কাঁচামালের দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে। অনেকে অর্ডার দিয়ে ডিসকাউন্টের কথা বলছেন।
‘এফবিসিসিআই-এর সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধাটি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেয়া হোক। কারণ বর্তমানে জ্বালানি ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অনেকে কারখানা চালাতে পারছেন না।
‘এলসি না খোলার কারণে কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এজন্য ব্যবসার ওপর একটা প্রভাব পড়ছে। আর ব্যবসা করতে না পারলে ঋণের কিস্তি দেয়া যাবে না। তাই ঋণ পরিশোধের সুবিধাটি আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দেয়া হোক, যাতে কেউ খেলাপি না হয়।’
এফবিসিসিআই-এর মতে, ব্যবসায়ীরা করোনায় যত না ক্ষতির মুখে পড়েছেন তার চেয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম, ব্যবসা না থাকা এবং সর্বোপরি ডলার সংকটে ব্যবসা হারাতে বসেছেন তারা।

এ অবস্থায় আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের যে পার্থক্য রয়েছে তা এক রেট করার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে একজন ব্যবসায়ীর খরচ পড়ে ১০৫ টাকা। কিন্তু পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেটা হয় ১০১ টাকা। এক্ষেত্রে একটা পার্থক্য থেকে যায়। তাই এটা এক রেট করার দাবি জানিয়েছি আমরা।’
এছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ তহবিলে ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২৭০ দিন করার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

সুদ হারের ৯ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সুদ হারের সীমা এখন তোলার প্রয়োজন দেখছি না। আগামী এক বছর যাতে সুদ হারের ক্যাপ না তোলা হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়েছি। কারণ সুদ হার কম থাকলে বিনিয়োগ বেশি হয়।
‘এই মুহূর্তে সুদ হার বাড়ালে যে মূল্যস্ফীতি কমবে বিষয়টি তেমন নয়। কারণ অনেক সাধারণ মানুষ ব্যাংকের বাইরেও রয়েছে। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। সুদ হার বাড়ালে মানুষের খরচ বেড়ে যাবে।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতিসহ সার্বিক সংকট আমলে নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ সব বিষয়ে সহায়তার কথা ভাবা হচ্ছে। কেবল তাই নয়, এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ঋণের বিপরীতে সুদ হারের নির্দিষ্ট সীমা তুলে না নেয়ার বিষয়ে দাবি জানানো হলে সেটি বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘এফবিসিসিআই পলিসিগত সুবিধা চেয়েছে। আমরা বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখব। তবে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত জানানো যাচ্ছে না।’
প্রণোদনার ঋণ শোধে এফবিসিসিআইয়ের আবেদন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে নীতি সহায়তা দিয়েছি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে, সে অনুযায়ী এমন নীতি সহায়তা আসতে পারে।’

মুখপাত্র বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়ছে, আমদানি কমেছে। ডলার সংকট কমে আসবে। তখন ব্যাংক নিজেই এলসি খুলতে পারবে। এরপরও প্রয়োজন দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।’
আমদানি-রপ্তানির রেট এক করার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কখনোই এক হয় না, একটা পার্থক্য থাকে। সাধারণত দুই টাকার পার্থক্য থাকে। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।’
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রপ্তানি পণ্যের জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। অথচ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির জন্য অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। ব্যাংকে ডলারের ঘাটতি থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
‘তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের বলেছে যে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। শুধু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর মার্জিন বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে জানুয়ারি মাসের পর ডলার সংকট থাকবে না।’

প্রসঙ্গত, করোনা সংকটের কারণে ২০২০ সাল জুড়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়নি ব্যবসায়ীদের। সরকারের নির্দেশনা এবং ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষ এই সুবিধার সুবাদে ২০২০ সালে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন ঋণগ্রহিতারা। এরপর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকলে ঢালাও সুবিধা ধীরে ধীরে কমানো হয়। কিস্তির কোনো অংশ জমা না দিয়েও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ২০২১ সালে কমানো হয়।
সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনার কারণে একজন ঋণগ্রহীতার যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই আর খেলাপি হবেন না।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com