শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করেও গাড়ির মালিকানা পাচ্ছেন না

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭.৪৯ এএম
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

ভারী যানবাহন কেনার জন্য আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ঋণ নেয় আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যেই সুদসহ ঋণের সব কিস্তি পরিশোধও করেছে প্রতিষ্ঠানটি; কিন্তু মেয়াদ শেষে অনাপত্তিপত্র (গাড়ির মালিকানা) বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। উল্টো ওই কোম্পানিকে ঋণ খেলাপি বানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআইবি রিপোর্ট দিয়ে ব্যবসায়িক সুনাম নষ্টের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বিষয়টি গ্রাহক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ভিত্তিতে বিধিমোতাবেক নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে পরামর্শ দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না আইপিডিসি। তবে বিষয়টি নিয়ে আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর বক্তব্য জানতে বারবার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ৬০ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে গাড়ি কেনার জন্য ১০.৫০ শতাংশ সুদে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেয় আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ। ঋণের টাকা ছাড় হওয়ার আগেই গ্রাহকের কাছ থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ টাকা করে ৬০টি চেক নেয় আইপিডিসি। এই ঋণের টাকায় নিটল টাটা থেকে ১০টি গাড়ি কেনা হয়, যা আইপিডিসি সরাসরি নিটল টাটাকে পরিশোধ করে। পরে সর্বশেষ কিস্তিসহ গত ৩০ জুন সুদসহ সর্বমোট ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮০ টাকা পরিশোধ করে আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ।

একইভাবে ২০১৭ সালে ৬০ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ৫ কোটি টাকা ঋণ নেয় আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ। এক্ষেত্রেও ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৫ টাকা করে ৬০টি কিস্তির চেক জমা নেয় আইপিডিসি। এই ঋণের টাকায় র‌্যাংগস মোটর্স থেকে ১৫টি গাড়ি কেনা হয়, যা আইপিডিসি সরাসরি র‌্যাংগস মোটরর্সকে পরিশোধ করে। গত ৩০ অক্টোবর এই ঋণের সর্বশেষ কিস্তিসহ সুদে-আসলে ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করেন ঋণ গ্রাহক; কিন্তু দুটি ঋণের সব টাকা পরিশোধ হলেও, এখনো গ্রাহককে অনাপত্তিপত্র দিচ্ছে না লিজিং প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। ফলে গাড়ির মালিকানা পাচ্ছেন না গ্রাহক। উল্টো গাড়ির মালিকানা না দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে আইপিডিসির দ্বারস্থ হলে মৌখিকভাবে প্রথম ঋণের ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭৪ টাকা এবং দ্বিতীয় ঋণের জন্য ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৬৪ টাকা দাবি করে আইপিডিসি। সুদে আসলে সব টাকা যথাসময়ে পরিশোধের পরও অতিরিক্ত এই টাকা কিসের জন্য, তা লিজিং কোম্পানির কাছে বারবার জানতে চাইলেও তারা সদুত্তর দিতে পারছে না।

এই টাকা কোন খাতে বকেয়া রয়েছে, তা লিখিতভাবে জানতে সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর আইপিডিসিকে চিঠি দেওয়া হলে তার জবাবে ২৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম ঋণের ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৬ টাকা এবং দ্বিতীয় ঋণের ৭৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৪ টাকা পাওনা রয়েছে। তবে এতে আবার অগ্রিম হিসাবে প্রথম ঋণের ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ টাকা এবং দ্বিতীয় ঋণের ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৫ টাকা সমন্বয় করা হয়নি বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির, যা উল্লিখিত পাওনা টাকা থেকে বাদ যাবে। তবে আইপিডিসির পক্ষে পাওনা দাবি করা এই চিঠিতে কে স্বাক্ষর করেছেন তার নাম এবং পদবিও উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া অভিযোগপত্রে আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ দাবি করে, ঋণের সর্বশেষ কিস্তি পরিশোধের পর অনাপত্তিপত্র চাইলে প্রতিষ্ঠান অনাপত্তি দেব, দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। পরে অনাপত্তির জন্য বারবার যোগাযোগ করার পরও অনাপত্তিপত্র না দিয়ে হঠাৎ করে তারা মৌখিকভাবে জানায় সুদের হার ১০.৫০ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, বিধায় প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত টাকা পাওনা রয়েছে। অতিরিক্ত দাবি করা এই টাকা পরিশোধ করা না হলে গাড়ি না দিয়ে উল্টো সিআইবি লিস্টে ক্লাসিফাইড করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়, যা গ্রাহককে জিম্মি করার শামিল। তবে কোন আইনে এবং কখন এই সুদের হার বাড়ানো হয়েছে—তা উক্ত প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রাহকের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা আলোচনাও করেনি এবং গ্রাহকের সম্মতিও নেয়নি। শুধু তাই নয়, মঞ্জুরি পত্রের শর্তানুযায়ী সুদের হার বাড়ানোর পর কিস্তির টাকার পরিমাণ বাড়ার কথা; কিন্তু এ সম্পর্কেও কোনো যোগাযোগ করেনি কিংবা কিস্তির টাকার পরিমাণও বাড়ানো হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগের পর গত ২ নভেম্বর বিষয়টি গ্রাহক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ভিত্তিতে বিধিমোতাবেক নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না আইপিডিসি।

এমজিএইচের এমডির বিরুদ্ধে মামলা:

আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে এর আগে আমরা দুই দফায় ১২ কোটি ও ১৮ কোটি টাকা গ্রহণ করে তা পরিশোধ করি। সেটি নিয়ে কোনো জটিলতা হয়নি। কিন্তু এবারের হয়রানি নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের (আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ) পক্ষ হতে দুটি চিঠির মাধ্যমে আইপিডিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করি। এতে তারা আমার ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন এবং সিআইবিতে আমাকে ডিফল্ট করা এবং কীভাবে ব্যবসা করি তাও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার অ্যাকাউন্টটি কোনো কিস্তি বাকি না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ডিফল্ট করে রিপোর্ট করে, যা সব আইন-কানুনকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী আইপিডিসি আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না। তাদের অযৌক্তিক এ দাবি অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করার শামিল। তারা আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সুনাম নষ্টের চক্রান্ত করছে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে যাবে।’

অভিযোগ সম্পর্কে আইপিডিসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে ওই ঋণের তথ্য চেয়েছে এবং আমরা তা সরবরাহ করেছি। গ্রাহকের সঙ্গে কোথাও হয়তো যোগাযোগের গ্যাপ থাকতে পারে। তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে তা সমাধান হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মমিনুল ইসলামকে মোবাইলে বারবার কল ও এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com