ডেস্ক রিপোর্ট॥
‘অনেক চেষ্টা করেও ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারিনি। তাই ভেবেছিলাম ট্রেন ছাড়ার আগে কাউন্টারে এসে স্ট্যান্ডিং টিকিট পাব। কিন্তু কাউন্টার থেকে জানিয়ে দিল কোনো টিকিট নেই। এখন টিকিট ছাড়াই ট্রেনে বাড়ি যেতে হবে’।
রোববার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে হতাশার সুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কিশোরগঞ্জগামী একটি ট্রেনের যাত্রী আনোয়ার হোসেন। পরিবারে আরো দুই সদস্য নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, কাউন্টারের স্টাফদের সঙ্গে তো কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। দাঁড়িয়ে যাওয়ার স্ট্যান্ডিং টিকিট কেন পাব না আমি। অথচ পুরো ট্রেন ভর্তি হয়ে যাত্রী যায়, বলছে টিকিট নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদের ছুটিতে সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে তিলধারণের ঠাঁই নেই। হাজার হাজার মানুষ টিকিট ছাড়াও ট্রেনে উঠে বসেন। অনেকে নেন স্ট্যান্ডিং টিকিট, অনেকে তাও নয়। কারণ, স্ট্যান্ডিং টিকিটও পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে প্রতিদিন ৩৩ হাজার ৫০০টি আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের নন-এসি কোচের বিপরীতে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট (ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট) বিক্রি করছে তারা। সার্ভার থেকে যার একটি টিকিটও বেশি বিক্রির সুযোগ নেই। ফলে স্ট্যান্ডিং টিকিটের সংখ্যা আসলে কম।
কমলাপুর রেলওয়ের একজন বুকিং সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রেলের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। আমরা শুধু ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট কাউন্টার থেকে ট্রেন ছাড়ার আগে আগে বিক্রি করি। ট্রেন ভেদে কোনো কোনো স্টেশন পর্যন্ত স্ট্যান্ডিং টিকিটের সংখ্যা হয় ৩ থেকে ১০টি মাত্র। তবে যাত্রীরা এটি বুঝতে চান না। তারা মনে করেন আমরা তাদেরকে ইচ্ছা করে টিকিট দিই না। স্ট্যান্ডিং টিকিট না পেয়ে তারা নানা বাজে কথা বলেন।
এদিকে ঈদ যাত্রার শুরুতে টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। তবে যাত্রীদের চাপে শেষ দিকে তারা হাল ছেড়ে দেন। প্রতিবারই দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে সব বাধা ঠেলে ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে উঠে বসেন অনেক যাত্রী।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবারের ঈদযাত্রার শেষ দিকেও এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। সব ট্রেনে বাড়বে ‘অবৈধ’ যাত্রী। দেশের কয়েকটি রেলওয়ে স্টেশন ছাড়া বাকি রেলওয়ে স্টেশনগুলো অরক্ষিত। ফলে হর-হামেশাই যাত্রীরা সেসব স্টেশন থেকে বিনা বাধায় ট্রেনে উঠতে ও নামতে পারেন।
অবৈধ যাত্রী প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, ১৮৯০ সালের যে আইন তার ১১২, ১১৩ ও ৬৮ ধারা মোতাবেক টিকিটবিহীন যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করা হয়।
জানতে চাইলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নন-এসি কোচের বিপরীতে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হয়। এরপরও যারা ট্রেনে উঠে যান, তাদের কিন্তু হঠাৎ করে নামিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এরা অবৈধ যাত্রী। আমরা ট্রেনে যদি তাদের পাই তাহলে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করি।
এদিকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েট অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী উঠলে কোচগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে পরিমাণ ভাড়া ঐ কোচ থেকে উঠে আসে, তার চেয়ে বহুগুণ টাকা রেলওয়ের খরচ হয় সেটি মেরামত করতে। যদি বিনা টিকিটে ভ্রমণের কালচার বন্ধ করা যায় এবং রানিং স্টাফরা নিজ দায়িত্বে অটল থাকেন তাহলে অতিরিক্ত যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারবে না।