সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০১:০৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ক্রসবার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার গাড়ি পারাপার: টোল আদায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত, আহত তিন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত দুই ফুট বাঁধই ভরসা, আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত কাটে খুলনা উপকূলবাসীর খুলনা অঞ্চলের ভরত ভায়না দেউল হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র খুলনায় সড়ক বিভাগের বাধায় বন্ধ কেসিসির ৭ মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সাবেক এমপি আজিজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘যৌন হয়রানি ব্যাধি’, বিপন্ন অভিযোগকারীর শিক্ষাজীবন

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪, ১২.৫৬ পিএম
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোট॥

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ‘ব্যাধি’ বেশ পুরোনো। সম্প্রতি পরিবর্তন এসেছে শুধু ধরনে। সরাসরির চেয়ে এখন বেশি হয়রানির ঘটনা ঘটছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। অভিযোগ করলে উল্টো ভুক্তভোগীকেই হয়রানি-হুমকিতে তটস্থ থাকতে হয়। লোকলজ্জা কাটিয়ে সাহস করে কেউ অভিযোগ করলেও তার শিক্ষাজীবন হচ্ছে বিপন্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী কারও সহযোগিতা পাচ্ছেন না। দুঃখজনক হলেও সত্য, নিপীড়কের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বড় একটি অংশ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হয়রানির শিকার হয়ে অভিযোগ দিলেই হুমকি-ধমকির শিকার হতে হয়। অভিযোগ তুলে নিতে নানা মহল থেকে চাপ আসে। শিক্ষাজীবন শেষ করে দেওয়ার হুমকি, এমনকি জীবননাশের হুমকিও আসে। ফলে অধিকাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগ না করে বিষয়টি চেপে যান।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তার চেয়েও বেশি জরুরি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মানসিক শক্তি জোগানো। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো—বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাটিয়ে ওঠা। কেউ যেন মনে না করেন যে, অপরাধ করলেও ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যাবেন।

অভিযোগ দিয়ে হিতে বিপরীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একই বিভাগের একজন ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি খোদ বিভাগের সভাপতি নিজেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগ তুলে নিতে দেন হুমকি-ধমকি। অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীকে হাত-পা কেটে হত্যার হুমকি দেন বলেও রয়েছে অভিযোগ।

সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার পরই ওই ছাত্রী তার অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগে ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগের ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, তিনি যখন বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তখন থেকে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা শুরু হয়। অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন তাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে রাজি না হওয়ায় তারা তাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। তাকে একঘরে করে দেওয়া, বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো ও স্নাতকে মৌখিক পরীক্ষায়ও তাকে ফেল করানো হয়।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী আরও উল্লেখ করেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ করেছি, তারা আমার গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। আমার বাবা-মা অসুস্থ, তাদের ওপর চাপ দিয়েছেন অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় আমাকে বিভাগের রুমে দরজা আটকে জোর জবরদস্তি করা হয়েছে।’

নতুন শিক্ষার্থীদের আমরা কিছু প্রশিক্ষণ দেবো। অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বুঝে উঠতেই পারে না যে, সে কোনো নিপীড়কের খপ্পরে পড়েছে। কী ধরনের আচরণ হলে সেটাকে যৌন নিপীড়ন বোঝায়, সেগুলো নিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করি।- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ভুক্তভোগী ছাত্রী যে মাসে অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন, একই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী। তিনিও অভিযোগ দেওয়ার পর হুমকি-ধমকির মুখে পড়েন। তার অভিযোগটি তদন্ত হয়। ঘটনার দুই বছর পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে অধ্যাপক মুহাম্মদ সাজ্জাদের পদোন্নতি তিন বছরের জন্য স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো আমি হয়রানির শিকার হয়েছি। তদন্তের নামে আমাকে অনেক উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন ও বাজে আচরণ করা হয়েছে। নিপীড়নবিরোধী সেলে কালক্ষেপণ করা হয়েছে, যাতে আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ মানে বিচারও শেষ, তাদের এমন ধারণা ছিল। আমি হাল ছাড়িনি। দুই বছর পর হলেও বিচার পেয়েছি। এখন শুনেছি আদালতের মাধ্যমে ওই শিক্ষক শাস্তি মওকুফের চেষ্টা করছেন।’

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা এক ছাত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যৌন হয়রানি নিয়ে বিভাগের প্রধানের কাছে অভিযোগ করলে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথমে সাজন সাহা ও বিভাগের প্রধান রেজোয়ান আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শিক্ষার্থীরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে আন্দোলন চালাতে থাকেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি যখন অভিযোগ করলাম, দেখলাম বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার উল্টো আমাকেই দোষী বানাচ্ছেন। তিনি আমাকেই খারাপ বানানোর চেষ্টা করতে শুরু করলেন। আমি খারাপ মেয়ে, বাজে চরিত্র আমার এমন একটা ধারণা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলেন তিনিও। পাশাপাশি নেগোশিয়েট করার জন্য চাপ দিয়েছেন। আমি শক্ত ছিলাম। সহপাঠী ও অন্য শিক্ষার্থীরাও সহযোগিতা করেছেন। এজন্য শেষ পর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন করার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকটি সংগঠন বেশ কয়েকবার বসেছি। এখন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই, আইনটি চূড়ান্ত হোক এবং সংসদে দ্রুত পাস হোক।- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফাওজিয়া মোসলেম

চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তার বিভাগের একজন ছাত্রী। পরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তার বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ সামনে আসে।

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে আরও যত ঘটনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার এক ছাত্রীর করা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় তাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন বিভাগের এক ছাত্রী। উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ল্যাবে একা কাজ করার সময় এবং কেমিক্যাল দেওয়ার বাহানায় নিজ কক্ষে ডেকে দরজা আটকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই শিক্ষক।

২০ ফেব্রুয়ারি যৌন নিপীড়নের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন তার এক নারী সহকর্মী। শাহবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা করা হয়।

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক ড. ওয়াসেল বিন সাদাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সহকর্মীর সঙ্গে ‘অশালীন’ আচরণের অভিযোগে গত বছরের ২৪ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এনামুল হককে দুই বছরের জন্য অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় প্রশাসন। এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিভাগের দুই সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতাসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।

হয়রানির অভিযোগ ও নিষ্পত্তি

দেশের শীর্ষ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল রয়েছে। গত দুই বছরে এসব সেলে ২৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতটি অভিযোগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি এবং চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি করে অভিযোগ জমা পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১২টি নিষ্পত্তি হয়েছে। দুটির তদন্ত চলছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। বাকি চারটি এখনো ঝুলে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটির মধ্যে দুটি প্রতিবেদন জমা পড়লেও অন্য দুটি তদন্তাধীন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিষ্পত্তি হলেও আরেকটি ঝুলে আছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর   বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা স্পর্শকাতর হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনাও বেশি হয়। অভিযোগগুলো তদন্ত ও খুব সাবধানে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়ম আছে। সেগুলো না মেনে আপনি তড়িঘড়ি কোনো পদক্ষেপ নিলে তা হিতে বিপরীতও হয়ে দাঁড়াতে পারে। ওই নিয়মগুলো মানার ক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজন পড়ে। তখনই সমালোচনা শুরু হয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার   বলেন, ‘আমি দায়িত্বগ্রহণের পর এ ধরনের ঘটনা জানতে পারলেই ব্যবস্থা নিয়েছি। কোনো ছাড় দেইনি। অভিযোগ এলেই ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা কমছে বলে মনে করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল   বলেন, ‘নতুন শিক্ষার্থীদের আমরা কিছু প্রশিক্ষণ দেবো। অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বুঝে উঠতেই পারে না যে, সে কোনো নিপীড়কের খপ্পরে পড়েছে। কী ধরনের আচরণ হলে সেটাকে যৌন নিপীড়ন বোঝায়, সেগুলো নিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করি।’

নিষ্ক্রিয় সেল, আইন করা জরুরি

২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট শিক্ষাঙ্গণ ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা করে দেন। সেখানে বলা হয়, যতদিন এ বিষয়ে উপযুক্ত আইন না হবে, ততদিন এ নীতিমালা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত ১৫ বছরেও এ বিষয়ে কোনো আইন করা হয়নি। প্রচলিত আইনগুলোতেও যৌন হয়রানিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নের শাস্তির বিষয়ে কোনো লিখিত বিধান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন করার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকটি সংগঠন বেশ কয়েকবার বসেছি। এখন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই, আইনটি চূড়ান্ত হোক এবং সংসদে দ্রুত পাস হোক।’

নিপীড়কদের ভয়, নিপীড়িতদের সাহস দিতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক   বলেন, ‘অভিযোগ এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুক্তভোগীকে মানসিক শক্তি জোগাতে হবে। সেই অভিযোগ জমার পর একটি সময়সীমা বেঁধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট সবার সামনে প্রকাশ করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জেবউননেছা বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের এ কমিটিরই কাজ নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে জাগ্রত করা দরকার। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এ সেলের বিষয়ে জানাতে হবে। তাহলে যারা নিপীড়ক, তারা ভয় পাবে। নিপীড়িতরা সাহস পাবে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com