সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

সুপারিতে সুবাতাস অর্থনীতিতে

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৯.১৭ এএম
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

লক্ষ্মীপুরকে বলা হয় সুপারির রাজ্য। এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে সুপারিগাছ। এ ছাড়া পুকুর পাড়, পরিত্যক্ত জমি, ফসলের খেতের ধারেও রয়েছে অসংখ্য সুপারিগাছ। সুপারি বিক্রি করেই সংসার চলে অনেকের। এ বছর সুপারির ভালো দাম পাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতেও গতি এসেছে।

চলতি মৌসুমের শুরুতেই সুপারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাটে সুপারি বিক্রি করে সেই টাকায় দৈনন্দিন কেনাকাটা সারছেন কৃষকরা।

রায়পুর উপজেলার রাখালিয়ার চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘১০০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করছি। গত বছর সুপারি বিক্রি করেছি ১০ লাখ টাকার। এবার ১৫ লাখ টাকার সুপারি বিক্রির আশা করছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুপারিগাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ২৫-৩০ বছর ফলন দেয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় দিন দিন এ অঞ্চলে সুপারি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলাজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সুপারি বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগবালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এবার প্রায় হাজার কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে জেলাজুড়ে।

চলতি বছর মৌসুমের শুরুতেই সুপারি বিক্রির বড় হাট বসেছে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী, সদর উপজেলার দালাল বাজার, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজার, খাসের হাট ও মোল্লারহাটে।

স্থানীয়রা জানান, উৎপাদিত সুপারির ৭০ ভাগ খাল, ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউসে ভিজিয়ে রাখেন ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা প্রতি কাওন (১৬ পণ) সুপারি বিক্রি হচ্ছে এখন।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারিগাছে ফুল আসে। পরে এ ফুল থেকে ফল হয়। সুপারি পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মূলত কার্তিক মাসের শেষ আর অগ্রহায়ণ মাসই সুপারির ভরা মৌসুম। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষি, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

হায়দরগঞ্জ ও রসুলগঞ্জের সুপাষিচাষী আবদুল খালেক ও ছালামত উল্যাহ বলেন, ‘সুপারিগাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা এবং তদারকির কারণে রোগবালাই কম ও ফলন বেশি হয়েছে।’

সুপারি ব্যবসায়ী জাফর আহমদ বলেন, প্রতিবছর এই মৌসুমে জেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে সুপারি কিনে মজুত করেন তারা। পরে শুকিয়ে বা পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘উপকূলীয় জেলা হওয়ায় এখানে সুপারি চাষ বেশি হয়। সুপারিকেন্দ্রিক লক্ষ্মীপুরে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ রয়েছে। সুপারি উৎপাদন, সংগ্রহ, শুকানো, প্রক্রিয়াজাত করার কাজে কর্মসংস্থান হচ্ছে অসংখ্য মানুষের। চলতি মৌসুমে সুপারির দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি সুপারি ২ টাকা পর্যন্ত দরে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। সুপারির আয় এবার ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com