চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা সাকিব ব্যাটিংয়ে ফিরতে না পারলে ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দেবেন, বললেন তার শৈশবের কোচ কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের।
স্পোর্টস ডেস্ক॥
মূল মাঠে স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্দান্ত ঢাকার ম্যাচ। কিন্তু দর্শকদের ছোটখাটো ভিড় জমা হয়ে গেলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই নম্বর মাঠে। শুক্রবার দুপুরে সেখানে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত সাকিব আল হাসান। টুকটাক স্কিল দেখানোর পাশাপাশি সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটিতে সময় কাটান রংপুর রাইডার্সের বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার।
চনমনে সাকিবের মনের আনন্দে ফুটবল খেলার দৃশ্য দেখে একদমই বোঝার উপায় নেই, গত কিছু দিন ধরে চোখের সমস্যায় ব্যাটিংয়ে ভুগছেন তিনি। হন্যে হয়ে খুঁজছেন সমাধান। উপায়ন্তর না পেয়ে বিপিএলে সবশেষ কয়েক ম্যাচ তিনি খেলেছেন বলা যায় শুধু বোলার হিসেবে। সমস্যা যেহেতু ক্রিকেটীয় নয়, বরং রোগসংক্রান্ত, তার ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনাও জাগছে অনেক।
সাকিবের শৈশবের কোচ ও সবসময়ের মেন্টরদের একজন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য তেমন চিন্তার কিছু দেখছেন না। বিপিএলে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ হলেও রংপুর রাইডার্সের অনুশীলনে সাকিবের নেটে দেখা গেছে তাকে।
বিপিএল চলার সময়ই সিঙ্গাপুরে চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন সাকিব। সেখান থেকে দেশে ফিরেই সিলেটে কোনো রকম অনুশীলন ছাড়া তিনি খেলেছেন রংপুরের প্রথম ম্যাচ। সেদিন ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি আট নম্বরে।
পরের ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে দশ ব্যাটসম্যান ক্রিজে গেলেও নামেননি সাকিব। শনিবারের ওই ম্যাচের দিন দুপুরে সিলেটের দুই নম্বর মাঠে এসে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ব্যাটিং অনুশীলন করেন তিনি। পর দিন রংপুরের ঐচ্ছিক অনুশীলনেও বেশ লম্বা সময় মাঠে কাটান এই অলরাউন্ডার।
সেদিন পাশাপাশি চলছিল কুমিল্লার অনুশীলন। রংপুরের প্রধান কোচ সোহেল ইসলামের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করার ফাঁকে সালাউদ্দিনকেও নিজের নেটে ডেকে নেন সাকিব। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় দুজনকে।
সিলেটে শুক্রবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন অবশ্য খোলাসা করতে চাইলেন না সাকিবের সঙ্গে তার সেদিনের কথোপকথনের বিষয়বস্তু।
“আমি আর সাকিব কথা বললে বেশিরভাগ ক্রিকেটের বাইরের কথাই বলি। খুব কম আমরা ক্রিকেট নিয়ে কথা বলি। আমরা সবসময় আমাদের সমস্যা কী, আমাদের সমাধান কী, সেটা নিয়ে চিন্তা করি বেশি। ক্রিকেট নিয়ে খুব কম কথা হয়। আর যে কথাগুলো হয়েছে সেগুলো আসলে আমার এখানে বলা ঠিক না।”
সালাউদ্দিনের সঙ্গে সেদিন কাজ করার পর কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচে ৫ উইকেট পড়লেও ব্যাটিংয়ে নামেননি সাকিব। তাই বাড়তেই থাকে ব্যাটসম্যান সাকিবকে দেখার অপেক্ষা। পরে ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বলেন, টুর্নামেন্টের শেষ দিকে পুরোদমে ব্যাটিংয়ে দেখা যেতে পারে সাকিবকে।
ব্যাটসম্যান সাকিব যে আপন রূপে ফিরতে পারবেন, এটা নিয়ে অবশ্য কোনো সংশয়ই নেই সালাউদ্দিনের।
“হ্যাঁ অবশ্যই (ব্যাটিংয়ে ফিরতে পারবে)ৃ যদি সে ব্যাটিংয়ে না ফিরতে পারে, তাহলে ক্রিকেট খেলবে না। সে যদি না-ই ফিরতে পারে, তাহলে তো সে ক্রিকেট খেলবে না। সে ফিরতে পারবে বলেই এখনও মাঠে আছে বলে আমি মনে করি।”
গত বছর ভারতে বিশ্বকাপ থেকে চোখের সমস্যায় ভুগছেন সাকিব। বাম চোখের ঝাপসা দৃষ্টির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যাটিং স্টান্স ও হেড পজিশন নড়ে যেতে দেখা গেছে বেশ কিছু ম্যাচে। সমাধানের খোঁজে বিশ্বকাপ চলাকালেই তিনি চেন্নাইয়ে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে।
এরপর জাতীয় নির্বাচনের কারণে কাটে তার ব্যস্ত সময়। বিপিএলের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরুর পর টের পান, চোখের সমস্যা রয়েই গেছে। তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে লন্ডন গিয়ে পরামর্শ নেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। কিন্তু সমাধান হয়নি। দেশে ফিরে রংপুরের হয়ে বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলার পর সমস্যার তীব্রতা বুঝতে পেরে এবার তার গন্তব্য হয় সিঙ্গাপুর।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ শুনে বিসিবির চিকিৎসা বিভাগ ‘কনজারভেটিভ’ পদ্ধতিতে সাকিবের চিকিৎসা এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এটির অংশ হিসেবে নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি শারীরিক ক্লান্তি ও চাপ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয় বাংলাদেশ অধিনায়ককে।