রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

অবন্তিকার অভিযোগে ছিলেন চুপ, সাবেক প্রক্টরের আরও যত ‘কীর্তি’

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪, ১২.৩২ পিএম
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকা ফাইরুজ গত বছরের নভেম্বরে উত্যক্ত ও হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ প্রক্টর অফিসে জানিয়ে রেখেছিলেন। তার দেওয়া অভিযোগ আমলেই নেননি সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল।

গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা শহরে নিজেদের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। ফেসবুক পোস্টে তিনি এক সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের নাম উল্লেখ করেন। পরে শনিবার রাতে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করে পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার না পাওয়া, মানসিক ভোগান্তির শিকার হওয়ার ঘটনা শোনা গেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর মুখে। তাদের মতো অবন্তিকাও অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার পাননি বলে জানা গেছে।

তিন বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ডাব পাড়ায় তাদের প্রক্টর অফিসে নিয়ে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রেখে মানসিক হেনস্তা করা হয়। তুচ্ছ এমন ঘটনায় প্রক্টর অফিস থেকে ওই শিক্ষার্থীদের বাসায় ফোন করে তাদের ডাব চোর ও নেশাগ্রস্ত আখ্যা দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম শান্ত বলেন, সেই দিনের কথা ভাবলে এখনো শিউরে উঠি। ক্যাম্পাসের ফল শিক্ষার্থীরা খেলে দোষ কিসের? সব ক্যাম্পাসে ফল শিক্ষার্থীরা খায়। এ কথা বলার পর আমাদের ডাব ব্যবসায়ী, মাদকসেবীসহ নানা তকমা দেওয়া হয়। পরিবারকে ফোন দেওয়া, এমনকি পুলিশ পর্যন্ত ডেকে আনা হয়। সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব ছিলেন না।

প্রক্টর অফিসে হেনস্তার শিকার ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ল বিভাগের শিক্ষার্থী বাদশা (ছদ্মনাম) বলেন, আমাদের এক বান্ধবী মারা যায়। ব্যাচের বন্ধুরা পরদিন পরীক্ষা পেছাতে চায়। পরীক্ষা পেছানো নিয়ে আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে হেনস্তা করা হয়। আমার বাবা-মাকে ডেকে এনে আমার নামে অনেক কটূকথা বলেন স্যাররা। অথচ এ ঘটনার সঙ্গে আমি যুক্তই ছিলাম না। আমার মা কান্না করতে করতে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

অভিযোগ, ২০১৯ সালের ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি যাওয়ার সময় সাইড না দেওয়ায় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ঘটনাস্থলে না থাকা শিক্ষার্থীদের নামও আসামির তালিকায় দিয়ে দেন মোস্তফা কামাল।

আসামিদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের একাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুল হুসাইন বলেন, ঘটনার সময় আমি যশোর ছিলাম। তবুও আমার নাম ঢুকিয়ে দেন সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল। এমন আরেক ভুক্তভোগী হলেন নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ।

আহমেদুল কবীর নামে আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে রাত ১০টায় আমরা সিনিয়র-জুনিয়র মিলে শান্ত চত্বরের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আমাদের কোনো কারণ ছাড়াই চলে যেতে বলেন প্রক্টররা। আমরা কারণ জানতে চাইলে পুলিশ ডেকে আনা হয়। এরপর আমাদেরকে ধরিয়ে দিতে যান। তখন শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানালে চাপের মুখে আমাদের ছাড়তে বাধ্য হন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেকরা এলেও সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল সবার সঙ্গে এমন আচরণ করতেন। অথচ সন্ধ্যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে নিজে সারা রাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা দিতেন তিনি নিজেই।

সন্ধ্যার পর ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে দেখলে ডেকে এনে বিয়ে করিয়ে দিতে চাওয়া, সাবেক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিসে বিকেলের পর তালা দেওয়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদানসহ আরও অভিযোগ রয়েছে প্রক্টর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, একটি অভিযোগ সে নভেম্বর মাসে দিয়েছিল। এ বিষয়ে তাকে অফিসে ডাকা হলে সে আর যোগাযোগ করেনি। তাই পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com