স্টাফ রিপোর্টার॥
বিনিয়োগকারিদের আকৃষ্ট করতে পারছেনা চতুর্থ প্রজন্মের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ফেস ভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে।
২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির ১৮.৪ শতাংশ নিট মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। ঋণ এবং অগ্রিমের বিপরীতে উচ্চ প্রভিশনকে দায়ী করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকটির প্রভিশন ১৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান সমস্যা এবং ক্রমবর্ধমান নন-পারফর্মিং লোন’র (এনপিএল) ধাক্কা এখানেও লেগেছে।
শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন উচ্চ প্রভিশন এর প্রভাব ভবিষ্যত মুনাফাতেও পড়তে পারে। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির পর ইতোমধ্যে ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ডিএসইর তথ্য মতে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর প্রথমদিন থেকেই স্বাভাবিকভাবে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে লেনদেন হয়। কিন্তু বিপর্যয় দেখা দিল কেবল গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেনের ক্ষেত্রে।
কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের শুরু দিন বুধবার ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। সোমবার (২১ নভেম্বর) ব্যাংকটির লেনদেন হয়েছে ৯ টাকায়।
ডিএসইর তথ্য মতে, সোমবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩২ লাখ ১৮ হাজার ১৫০টি শেয়ার সর্বোচ্চ ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তাতে দিন শেষে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ারের দাম ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হয়েছে। এখানে কোম্পানির কী করার আছে। শেয়ারের দাম বাড়বে না কমবে এটা নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের ওপর। আমরা দাম কমাতে কিংবা বাড়াতে পারি না। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মৌলভিত্তি ভালো বলে দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনীহা রয়েছে। আর বর্তমানে দেশে এ খাত নিয়ে নানামুখী গুজব বিনিয়োগকারিদের মনে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। যার প্রভাব ও এ ব্যাংকের লেনদেন চিত্রে পরিস্ফুটিত।
২০১৩ সালে দেশে যাত্রা শুরু করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। পরবর্তীতে ইসলামী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা নিজাম চৌধুরী। ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মাইমুনা খানম।
আইপিওর মাধ্যমে ৪২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকটি। কোম্পানির প্রসপেক্টাস (তথ্য বিবরণী) অনুসারে এ মূলধনের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) বিনিয়োগ হবে। ২৬৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে সরকারি সিকিউরিটিজ অথবা বন্ডে। ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে পুঁজিবাজারে। এছাড়া আইপিও’র খরচ ৬ কোটি টাকার কিছু বেশি। পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের পর ব্যাংকের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৯৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ। পরিশোধিত মূলধনের দিক থেকে ব্যাংকটির আকার অনেক বড়।
অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুসারে, ব্যাংকটি ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে ৩৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৮.৩৬ কোটি টাকা। এর শেয়ার প্রতি মূল আয় (ইপিএস) গত বছরের একই সময়ের ০.৯৪ টাকা থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ০.৬৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রভিশন রাখার আগে ব্যাংকের মুনাফা ২০২১ সালে ২৬.৮৩ কোটি টাকা ছিল, যা ২০২০ সালে ছিল ১৯ কোটি টাকা। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে মুনাফা দাঁড়াবে ৩০.২২ কোটি টাকা।
নতুন তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির আইপিও আয়ের ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস এবং প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাঙ্কের তহবিলের খরচ অন্যান্য অনেক প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় বেশি ছিল, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে সীমিত হওয়ায় মুনাফায় টান পড়েছে।
তালিকাভুক্ত ৩৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১১তম সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের। এর স্পন্সর এবং পরিচালকদের আইপিও-পরবর্তী শেয়ারের ৪৫.৭ শতাংশ মালিকানা রয়েছে যা পরবর্তী তিন বছরের জন্য লকইন করা হবে।