সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন

বেতন-বোনাস ইস্যুতে পোশাক কারখানায় অস্থিরতার শঙ্কা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪, ১.০১ পিএম
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে ৪১৬টি তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। খবর ডয়েচেভেলের।

গার্মেন্ট মালিকেরা বলছেন, সরকারের প্রণোদনার টাকা না পেলে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এবার তিনটি কারণে সংকট হতে পারে। এর মধ্যে আছে, প্রথমত, গত দেড় বছরে অর্ডার অনেক কমে গেছে। এখন কারখানাগুলো সক্ষমতার ৫০ থেকে ৬০ ভাগ উৎপাদনে রয়েছে। ফলে মালিকদের ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হচ্ছে। দ্বিতীয়, ব্যাংকগুলো গার্মেন্ট মালিকদের সহযোগিতা করছে না। আর তৃতীয়ত, কাস্টমসের অহেতুক ঝামেলার কারণে শিপমেন্টের সময় ফেল করছেন তারা। ৭ থেকে ১০ দিন মাল ফেলে রাখছে। এর ফলে ঠিকমতো টাকাও আসছে না।

শিল্প পুলিশেরর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঈদের আগে বেতন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ১৩১টি কারখানায়। বোনাস না হতে পারে ১০৮টি, বেতন-বোনাস দুটিই না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ১৭৭টিতে। সব মিলিয়ে সংকট হতে পারে এমন কারখার সংখ্যা ৪১৬টি।

এদিকে উদ্ধুত পরিস্থিতিতে সোমবার বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএর নেতা এবং বেপজা, কলকারখানা অধিদফতর, শ্রম অধিদফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিল শিল্প পুলিশ। সেখানেও আলোচনায় এই সংকটগুলো উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমরা তো মালিকদের নির্দেশনা দিতে পারি না, অনুরোধ করেছি। আমরা একটি তালিকা করেছি, সেখানে যেসব ফ্যাক্টরিতে সংকট হতে পারে, সেগুলো তাদের জানিয়েছি। মালিকেরা বলেছেন, শ্রমিকদের বেতন এবং ভাতা ঈদের আগে তারা পরিশোধ করবেন। অধিকাংশ কারখানাই যথাসময়ে পরিশোধ করতে সক্ষম হবে। তবে কেউ কেউ ব্যর্থ হতে পারেন।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উপকণ্ঠে তিন পাশে শিল্পাঞ্চল রয়েছে। এ পথ ধরেই ঈদে ঘরমুখী মানুষ গ্রামে যাবেন। ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে। এতে করে সড়ক অবরোধসহ সহিংসতা হতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঘরমুখো মানুষকে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘শিল্প পুলিশ যে তালিকা দিয়েছে, আমার ধারণা সংকটের আশঙ্কা আছে আরও বেশি কারখানায়। এখন পর্যন্ত যে আমরা এই সেক্টর টিকিয়ে রেখেছি, সেটাই বড় ব্যাপার। প্রথমত, ১২ টাকার গ্যাসের দাম হয়েছে ৩০ টাকা। বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। ৫৬ শতাংশ বেড়েছে শ্রমিকদের বেতনও।

তিনি বলেন, গত দেড় বছরে রফতানি আদেশ কম এসেছে। যাও এসেছে সেগুলো সময়মতো ডেলিভারি করা যাচ্ছে না। কারণ বেশি দাম দিয়েও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এখন প্রতিটি কারখানা সক্ষমতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উৎপাদনে আছে। কোনো কারখানা যদি সক্ষমতার ৮০ শতাংশের বেশি উৎপাদনে না থাকে তাহলে কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে না৷

শিল্প পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টি করে বিধি-নিষেধ আরোপ করানো গেলে সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ বিরোধী একটি শক্তি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজারের মতো গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে৷ এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এই খাতে উৎপাদিত পোশাক বিশ্বের প্রায় ১৬৭টি দেশে রফতানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার মূল্যমানের, যা রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবর রহমান বলেন, আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। সমাধানের চেষ্টা করছি। কেউ অযাচিত হস্তক্ষেপ করে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারবে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com