টিডিএস ডেস্ক॥
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার বন্ড জালিয়াতি, আমদানি-রপ্তানিতে জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। পাচারের অর্থে লন্ডন, কানাডা ও দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
বাড়ি কিনেছেন প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডন, কানাডার স্কারবরো ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন দুবাইয়ের মেরিনা এলাকায়। তার মালিকানাধীন চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচার করে বিদেশে এসব সম্পদ কিনেছেন তিনি।
ব্রিটিশ সরকারের ল্যান্ড রেজিস্ট্রি দপ্তর ও ব্রিটিশ কোম্পানি হাউসের নথিতে বলা হয়েছে, লন্ডন শহরের ব্যয়বহুল কেনসিংটনের ফিলিমোর গার্ডেন এবং ব্রান্সউইক গার্ডেনে নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার মেয়ে আনিকা ইসলামের মালিকানাধীন দুটি আলাদা কোম্পানির নামে ২০১৯ ও ২০২০ সালে বিলাসবহুল বাড়িগুলো কেনা হয়। নগদ অর্থে পরিশোধ করায় দাম পড়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড।
ফিলিমোর গার্ডেনে ‘এএনডব্লিউ লন্ডন প্রোপার্টিজ লিমিটেড’ কোম্পানির নামে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বাড়িটি কেনা হয় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। পরিচিতি নম্বর বিজিএল ৩৭৩৬৬। ৩০ ফিলিমোর গার্ডেনস, কেনসিংটন, লন্ডন ডব্লিউ৮ ৭কিউ ই ঠিকানার বাড়িটির আয়তন ৫০০ বর্গমিটার (৫৩০০ বর্গফুট)। পাঁচটি বেডরুম, চারটি বাথরুম ও চারটি রিসিপশন রুম রয়েছে বাড়িটিতে।
এ ছাড়া ব্রান্সউইক গার্ডেনে ‘নাসা প্রোপার্টিজ লিমিটেড’ কোম্পানি নামে ৮০ লাখ পাউন্ডে আরেকটি বাড়ি কেনা হয় ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। পরিচিতি নম্বর এনজিএল ৪৭৫৭৩৭। ২ ব্রান্সউইক গার্ডেন, লন্ডন ডব্লিউ৮ ৪এজে ঠিকানার বাড়িটির আয়তন ৩৯৬ স্কয়ার মিটার। এতে পাঁচটি বেডরুম, চারটি বাথরুম, তিনটি রিসিপশন রুম ও সুসজ্জিত গার্ডেন রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই মেরিনা জেলায় প্রায় ১৫০০ স্কয়ার ফুটের চারটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন তিনি।
কানাডার টরন্টো থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের স্কারবরোতে ক্যানস্কট রোডে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন নজরুল ইসলাম। লন্ডন, দুবাইয়ে নজরুল গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যবসার আড়ালে নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করেছেন। গত চার বছরে অবৈধভাবে কমপক্ষে ২১০ কোটি টাকা যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন।
পাচারের অর্থে তিনি তার আত্মীয়-স্বজনের নামে বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি কিনেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব পাচারের তথ্য। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক এলসি দেখিয়ে নামেমাত্র আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছেন। নাসা গ্রুপের টেক্সটাইল ইউনিট ও গার্মেন্ট ইউনিটে আলাদা করে ঋণের বিষয়ে অনিয়ম পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে দেখা গেছে, টেক্সটাইল ইউনিটে ২০১৫ সালে ঋণসীমা ছিল ১৪৫ কোটি টাকা কিন্তু নেওয়া হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। আর আমদানি করা হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকার, কিন্তু রপ্তানি করেছে ১৫৩ কোটি টাকার পণ্য। ২০১৬ সালে ২৮ কোটি টাকা সীমা অতিক্রম করে তিনি ঋণ নিয়েছেন ১৭৮ কোটি টাকা। পণ্য আমদানি করেছেন ১৬০ কোটি টাকার, আর রপ্তানি করেছেন ১৮৮ কোটি টাকার পণ্য।
২০১৭ সালে আমদানি করেছেন ২০৪ কোটি টাকার, আর রপ্তানি করেছেন ১৯৩ কোটি টাকার পণ্য। ২০১৮ সালে আমদানি করেছেন ২২৫ কোটি টাকার, আর রপ্তানি করেছেন ১৭৮ কোটি টাকার পণ্য। গার্মেন্ট ইউনিটে ঋণ বিতরণ, আমদানি-রপ্তানির তথ্যেও এমন অনিয়ম পাওয়া গেছে। এই ইউনিট ২০১৫ সালে আমদানি করেছে ৬৪৮ কোটি টাকার, আর রপ্তানি করেছে ৫৫৪ কোটি টাকার পণ্য।