আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রুশ অর্থনীতি পঙ্গু করে দিতে আরও শক্তপোক্তভাবে মাঠে নামছে ইউরোপ। গত এক মাসে মস্কোর ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। এবার দেশটি থেকে কয়লা, কাঠ, রাসায়নিকসহ মূল্যবান বিভিন্ন পণ্য আমদানি বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। মঙ্গলবারের (৫ এপ্রিল) এক সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বলা হচ্ছে, ইউরোপীয় দেশগুলো এসব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করলে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ইউরো বা ৯৮৬ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে রাশিয়া।
সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে বার্ষিক আরও এক হাজার কোটি ইউরো সমমূল্যের সেমিকন্ডাক্টর, কম্পিউটার, এলএনজি প্রযুক্তিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রিক্যাল ও পরিবহন সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। রুশ জাহাজ ও ট্রাকগুলো ইইউভুক্ত ২৭ দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে জ্বালানি পণ্য, খাদ্য ও ওষুধের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ভিটিবিসহ আরও তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ করবে। এরই মধ্যে সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এসব ব্যাংককে। এছাড়া, রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ আরও কয়েক ডজন ব্যক্তিকে ইইউ’র কালোতালিকাভুক্ত করা হবে।
ইউরোপ রুশ কয়লা আমদানি নিষিদ্ধ করলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর থেকে এটাই হবে প্রথমবার রাশিয়ার কোনো জ্বালানি পণ্যের ওপর তাদের বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনা।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে গত জানুয়ারিতেই ইউরোপীয় কমিশন এ ধরনের একটি নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে জার্মানির বাধায় সেটি আর পাস হয়নি। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই রাশিয়ার জ্বালানির ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।
তবে জার্মান সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার কয়লা আমদানিতে ইইউ’র ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞায় এবার সমর্থন দেবে জার্মানি।
গত বছর রাশিয়া থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি ইউরো সমমূল্যের তেল-গ্যাস আমদানি করেছে ইউরোপ। সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমা এই জোট রুশ তেল-গ্যাসের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আগে চার দফায় রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে কাঠ, সিমেন্ট, রাবার ও রাসায়নিক দ্রব্যের পাশাপাশি ভদকার মতো পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব দেবে ইউরোপ। প্রতি বছর দেশটি থেকে প্রায় ৫০০ কোটি ইউরো সমমূল্যের এ ধরনের পণ্য আমদানি করে তারা।
রাশিয়ার কাছে এক হাজার কোটি ইউরোর প্রযুক্তি রপ্তানি বন্ধ করার পাশাপাশি নতুন এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বছরে অন্তত দুই হাজার কোটি ইউরো কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।