রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

ড্রাগন চাষের নতুন পদ্ধতি সাড়া ফেলেছে

  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২.৩৪ পিএম
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি॥

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় নতুন পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষের ফলে তিনগুণ ফলন হচ্ছে। ২০০৭ সালে ড্রাগন ফলের চাষ এ দেশে শুরু হলেও ২০১৪ সালের পর থেকে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ড্রাগনের চাষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মাঠে ড্রাগনের গতানুগতিক চাষ পদ্ধতির বাইরে এসে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে চাষ মডেল হিসেবে বিবেচিত করা হচ্ছে। হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার মান্দারতলা গ্রামের কৃষক বিপ্লব জাহান (রবিউল) পায়রাডাঙ্গা গ্রামের চারাতলা বাজার এলাকায় ১১ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন আল্ট্রা হাইডেনসিটি ড্রাগন বাগান। যার নাম দিয়েছেন ‘বাংলা পদ্ধতি’।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মো: হামিদুর রহমান এ ড্রাগন বাগানটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, এ বাগানটি যে পদ্ধতিতে গড়ে তোলা হয়েছে তা সারা দেশে অনুকরণযোগ্য। বাগানটির চাষ পদ্ধতি দেখে তিনি উচ্চ প্রশংসা করে বলেন, অল্প জায়গায় অধিক ফলন পেতে দেশের ড্রাগন চাষিদের এ পদ্ধতিতে বাগান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো: মেহেদী মাসুদ খান বাগানটি পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, পায়রাডাঙ্গা গ্রামে ড্রাগনের এই চাষ পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার। তিনি বলেন, ড্রাগনচাষিরা যেখানে এক বিঘায় ৮৫০টি চারা রোপণ করেন, সেখানে এই বাগানে ২৬’শ থেকে ২৭’শ চারা লাগানো হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ফলে তিনগুণ ফলন বেশি হবে।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, চায়না পদ্ধতির আদলে স্থাপন করা বাগানটিতে লম্বা সারি করে খুঁটি স্থাপন করে তার ওপর দিয়ে লম্বা করে একটি প্লাস্টিক পাইপ, রড ও সিমেন্টের তৈরি আড়া স্থাপন করা হয়েছে। এর দ্ইু পাশে দুটি তুলনামূলক সরু আড়া স্থাপন করা হয়েছে, যা দেখতে ঠিক যেন তিন তারের বৈদ্যুতিক খাম্বার মতো। নিচে ৬ ফুট প্রশস্ত বেডের মাঝখানে স্থাপিত খুঁটির দুই পাশ দিয়ে সারি করে ড্রাগন গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রতিটি গাছ শিকড় বিস্তারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পেয়েছে। আবার আড়ার ওপর উঠার পর পেয়েছে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস এবং ডালপালা ছড়ানোর জায়গা। ফলে ফুল ও ফল আসছে প্রচুর পরিমাণে। অন্যরা যেখানে ৩৩ শতাংশ বিঘার জমিতে ৮৮০টি গাছ রোপণ করেন, সেখানে পায়রাডাঙ্গার মাঠের এই ড্রাগন ক্ষেতে বিঘা প্রতি প্রায় ২৮০০টি গাছ লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক বিপ্লব জাহান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মাত্র ৩৮ হেক্টর জমিতে ২৭৭ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৪ হেক্টর জমিতে ৪৩১ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৮ হেক্টর জমিতে ৮১৫ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২৭ হেক্টর জমিতে ২৮০২ টন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৪১ হেক্টর জমিতে ৩৪৬৪ টন ড্রাগন ফল উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি বছরই দেশে দ্বিগুণ হারে এই ফলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পেলেও আধুনিক ও লাগসই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করে তিনগুণ ফল উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে হরিণাকুণ্ডুর এই বাগান মালিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ড্রাগন ফলের উৎপাদন ছিল মাত্র ৬৬ হাজার কেজি, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে এক কোটি কেজিতে উন্নীত হয়। এ হিসাবে বিঘা প্রতি প্রায় ১৩ টন ড্রাগন ফল উৎপন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত ৩৩ শতাংশ জমিতে সর্বোচ্চ ২২০টি খুঁটিতে টায়ার লাগিয়ে ৮৮০টি ড্রাগন গাছ লাগানো হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে চীন দেশে খুঁটিতে ড্রাগন চাষ ছাড়াও লম্বা লাইন করে ড্রাগন ফলের গাছ লাগানো হয়, যাতে কিছু গাছ বেশি লাগানো যায়।

এ বিষয়ে কৃষক বিপ্লব জাহান জানান, ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে লাগানোতে প্রতিটি গাছ সমানভাবে খাদ্য, পানি ও পুষ্টি পাচ্ছে। পানির কোনো অপচয়ও নেই এই পদ্ধতিতে। এই বাগান বিঘা প্রতি ১০ টন করে ফলন আশা করছেন। নতুন পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষের বিষয় নিয়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাফিজ হাসান জানান, কৃষক বিপ্লব জাহান ওরফে রবিউল যে পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করছেন তা নিশ্চয় অন্য চাষিদের জন্য অনুসরণযোগ্য। তিনি ওই চাষিকে সময়মতো পরামর্শ ও ড্রাগন ক্ষেত পরিচর্চার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com