ডেস্ক রিপোর্ট॥
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেড়েছে পানিবাহিত রোগ জন্ডিস তথা হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাস রোগের প্রকোপ। গত এক সপ্তাহে ৭০ জন শিক্ষার্থী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দূষিত পানি ও ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে এই তথ্যটি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. লোমান মঞ্জুর (অপু)।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমারসিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। আর টিউবওয়েল ও মোটরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা।
আর শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়।
রাবির মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা করালে হেপাটাইটিস ‘এ’ অর্থাৎ জন্ডিস ধরা পড়ে ৭০ জন শিক্ষার্থীর।
গত ৭ জানুয়ারি শরীরে জ্বর নিয়ে বাসা থেকে ক্যাম্পাসে ফেরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাবের আহমেদ।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে আসার পরদিন থেকে আমার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে। এ অবস্থায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ১৩ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেকে) ভর্তি হই। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানায় হেপাটাইটিস ‘এ’ অর্থাৎ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছি। এ থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘ সময় বিশ্রামে থাকতে হবে আমাকে।
এভাবে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রেদোয়ান-উল হক নাসিফ। শুধু তারাই নন এভাবে হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, ‘শীতকালে ঠান্ডার কারণে মানুষ চলাচল কম করে, যার ফলে রক্ত চলাচলও কম করে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের কারণেই জন্ডিস হচ্ছে। এটি মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের সচেতনতা। যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকে তাদের সাবমারসিবলের পানি খেতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত টিউবওয়েল বা সাবমারসিবলের বিশুদ্ধ পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। যাদের লক্ষণ খারাপ মনে হয়, তাদের দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যেদিন থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সেদিন থেকেই আমরা মেডিকেল সেন্টারকে বলে দিয়েছি সচেতনভাবে দেখার জন্য। এছাড়াও আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জানাতে চেষ্টা করেছি তারা যেন যেখান-সেখানের পানি পান না করে। টিউবয়েল বা সাবমার্সিবলের বিশুদ্ধ পানি পান করে।